হেবা কি ,কিভাবে করবেন এবং হেবা সম্পর্কিত প্রযোজনীয় তথ্য সমূহ—
নিম্ন উক্ত বিষয় গুলো নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করবো—
১।হেবা কাকে বলে
২।হেবার প্রকারভেদ
৩।হেবার শর্তসমূহ কি কি
৪।যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে হেবা করা যেতে পারে অথবা হেবা দলিল কাকে দেওয়া যায়
৫।হেবা দলিল বাতিলের নিয়ম
৬।কি কি কারনে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না।
৭।অন্য ধর্মাবলম্বী ক্ষে্ে হেবা।
৮।হেবা রেজিঃ ফিস/ খাত সমূহ।
হেবা কাকে বলে—-
কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে কোনো বিনিময় ব্যতিরেকে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তাকে হেবা বলে। হেবা সম্পন্ন করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-হেবার প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি এবং দখল হস্তান্তর।
হেবার প্রকারভেদ—
সাধারণত হেবাকে ২ দুই ভাবে ভাগ করা য়ায়—নিম্নরুপ,
১।হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ
২।হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ
হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ-—
হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ হলো সম্পত্তির মূল্যের পরিশধের বিনিময়ে হেবা। হেবা বা দানের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ ব্যতিক্রম বটে । এই হেবাকে বৈধ করতে হলে ২ (দুটি) শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে।
১। দান গ্রহিতা কর্তৃক হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ এর বিনিময় মূল্যে প্রকৃ্ত অর্থেয় দিতে হবে ।
২। দাতার মালিকানা পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।
হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ—
কোন একজন মুসলিমঅন্য কোন একজন মুসলমানকে কোন প্রকার বিনিময় প্রদানের শর্তযুক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করাকে হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ বলে। হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ মূলত দান। এটা সম্পাদন হওয়ার জন্য দখল হস্তান্তর আবশ্যক। বিনিময় প্রদানের পূর্বে হেবা বা শর্ত-উল এওয়াজ বাতিলও করা যায়।
হেবার শর্তসমূহ কি কি—
কোনো হেবা আইনানুগ হতে হলে অবশ্যই সেখানে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো-
(১) দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা বা প্রস্তাব ।
(২) দানগ্রহীতা কর্তৃক উহা গ্রহণ ।
(৩) দাতা কর্তৃক দানগ্রহীতাকে দানের বিষয়বস্তুর দখল প্রদান করতে হবে। এই শর্তগুলো যদি পালন করা হয়, তাহলে হেবাটি আইনানুগভাবে সিদ্ধ হবে ।
যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে হেবা করা যেতে পারে:
রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বি) নং অনুসারে হেবার ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে মুসলিমরা যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে হেবা করা যেতে পারে তা নিম্নরূপঃ
- সহোদর ভাই-বোন।
- পিতা/মাতা-ছেলে/মেয়েকে।
- স্বামী-স্ত্রী এর মধ্যে।
- দাদা/দাদী-নাতী/নাতনীকে।
- নানা/নানী-নাতী/নাতনী এই কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তর করা
যায়।
হেবা দলিল বাতিলের নিয়ম–
মুসলিম আইন অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত অবস্থায় দাতা হেবা বা দান বাতিল করতে পারেন।
১. দখল প্রদানের আগে যেকোনো সময় দাতা হেবা রদ করতে পারে। কারণ দখল প্রদানের আগে হেবাটি পূর্ণভাবে কার্যকর হয় না।
২. হেবাদাতাই শুধু হেবাটি বাতিল করতে পারেন। দাতার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা এটি বাতিল করতে পারবে না। অর্থাৎ দান রদে বা বাতিলে গ্রহীতার ইচ্ছা নহে, দাতার অভিপ্রায়ই মুখ্য এবং প্রযোজ্য।
৩.দান গ্রহণের পূর্বে দাতার মৃত্যু হলে দান বাতিল বলে গণ্য হবে।
এছাড়া অনেকেই একটা বিষয় জানেন না যেটা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, পাওয়ার অফ এটর্নি বিধি, ২০১৫ এর বিধি ৪ অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে দান বা হেবা সম্পর্কিত ঘোষণা বিষয়ে কোন ক্ষমতা অর্পণ করা যায় না।
কি কি কারনে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না।
একটা হেবা দলিল সকল শর্ত প্রতিপালন করে একবার রেজিস্ট্রি হলে সেটা আর সাব-রেজিস্টার বা জেলা রেজিস্টার কেউই এই দলিল বাতিল করতে পারে না।
বাতিল করতে হলে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা করতে হবে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ সাল অনুযায়ী, আংশিক বাতিল চাইলে ৪০ ধারা অনুযায়ী, সম্পূর্ণ বাতিল চাইলে ৩৯ ধারা অনুযায়ী এবং ভুল হয়েছে এবং এটা রদ করতে চাইছেন তাহলে ৩৬ ধারায় মামলা করতে হবে।
নিম্ন ক্ষেত্রে হেবা বাতিল করা যায় না-
১. দখল হস্তান্তর হয়ে গেলে।
২. হেবা গ্রহণ করে বিক্রি করে দিলে এবং হেবা গ্রহণকারী যদি অন্য কাউকে হেবা করে দেয়
৩. হেবাকৃত সম্পতির দাতা গ্রহিতা স্বামী বা স্ত্রী হলে।
৪. হেবাকৃত সম্পতি হারিয়ে বা ধ্বংস হয়ে গেলে।
৫. হেবাকৃত সম্পতি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলে।
৬. হেবাকৃত সম্পতি বিনিময় দান বা হেবা বিল এওয়াজ হয়ে থাকিলে।
উল্লেখ্য বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি কোন দলিল রেজিস্ট্রি হওয়া মানে দলিলের গর্ভে দখল অর্পণের বিষয়টা উল্লেখ করেই রেজিস্ট্রি হয়।
অন্য ধর্মাবলম্বী ক্ষেএ হেবা—-
একজন মুসলমান ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক অন্য একজন মুসলমানকে শুধুমাত্র হেবা করতে পারে। কিন্তু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। অন্য ধর্মাবলম্বীগন চাইলে রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বিবি) নং অনুসারে দানের ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন।
হেবা দলিল আইন এবং হেবা রেজিঃ ফিস/ খাত সমূহ—
হেবা দলিল এবং বিক্রয় দলিল উভয়ই বাংলাদেশের আইন অনুসারে নিবন্ধিত হওয়া প্রয়োজন। বিক্রয় দলিলের নিবন্ধন ফি সম্পত্তির পরিমান ও মূল্যের উপর নির্ভর করে। হেবা দলিল এর ক্ষেত্রে সম্পত্তির পরিমান ও মূল্য যতই হোক না কেন এর ফিস পরবর্তন হয় না। হেবা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১। রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ টাকা
২। স্ট্যাম্প শুল্ক ১০০০ টাকা
৩। ই ফি ১০০ টাকা
৪। এন ফি-(বাংলা) ১৬০ টাকা (১০পৃষ্ঠা হিসাবে)
৫।এন ফি-(ইংরেজি) ২৪০ টাকা(১০পৃষ্ঠা হিসাবে)
৬। এনএন ফি ২৪০ টাকা (বাংলা) (১০ পৃষ্ঠা হিসাবে)
৭।এনএন ফি ৩৬০টাকা (ইংরেজি)(১০ পৃষ্ঠা হিসাবে)
৮। হলফনামা স্ট্যাম্প ৩০০ টাকা
৯। কোর্ট ফি ১০ টাকা
মোট খরচ ২৫১০ টাকা
হেবা করার জন্য যোগাযোগ করুন বাংলাদেশ এর সবচেয়ে স্বনামধন্য ল ফার্ম এর সাথে –
তাহমিদুর রহমান রিমুরা টি এল এস একটি সনামধন্য ‘ল’ চেম্বার যেখানে ব্যারিস্টারস , আইনজীবীর মাধ্যমে হেবা সহ অন্য সকল বিষয়ে আইনগত সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কোন প্রশ্ন বা আইনী সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ-
ই-মেইল: info@trfirm.com
ফোন: +৮৮০১৮৪৭২২০০৬২, +৮৮০১৭৭৯১২৭১৬৫
ঠিকানা:হাউজ ৪১০, রোড ২৯, মহাখালী ডি ও এইচ এস