LAW FIRM IN BANGLADESH TRW LOGO TAHMIDUR RAHMAN

Contact No:

+8801708000660
+8801847220062

হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ

মুসলিম আইনে উইল সংক্রান্ত বিষয়

উইল বা অছিয়ত:

মুসলিম আইনে উইলকে অছিয়ত বলা হয়েছে । উইলের আরবী প্রতিশব্দ ওয়াসিয়াত | এর অর্থ ভার অর্পণ, নিদেশ, উপদেশ মিলানো বা কোন জিনিস অন্যদের পযন্ত পৌছানো পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এ সম্পকে মুসলমানদের অনুমতি দিয়েছেন তা করার জন্য । মৃত্যুকালে কিংবা মুত্মুর আগে পরের জন্য নিজ মালিকানার কিছু অংশ নিস্বাথভাবে কাউকে দান করার নাম ওসিয়ত বা উইল |পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এ সম্পকে মুসলমানদের আনুমতি দিয়েছেন তা করার জন্য ।

মা-বাবা জীবদ্দশায় নিজেদের নামে থাকা জমিজমা ভবিষ্যতে সন্তানেরা যেন পায়, তা নিশ্চিত করে যেতে চান। এ নিয়ে উদ্দিগ্নও থাকতে দেখা যায় অনেককে । বিশেষ করে যাঁদের শুধু কন্যা সন্তান আছে, তাঁদের দুশ্চিন্তাই যেন বেশি ।

অনেক মা- বাবা বলেই বসেন, ছেলেমেয়ের নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাবেন। যেন তাদের মৃত্যুর পর পুরো সম্পত্তি সন্তানেরা নিশ্চিন্তভাবে ভোগ করতে পারে । এ নিয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্তও হন। রীতিমতো স্ট্যাম্পে ঘোষণা দিয়ে নোটারি করিয়ে রাখেন কেউ কেউ । তাহলে আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে । এগুলো জানতে হবে এবং মানতে হবে ।

Screenshot 2023 03 16 At 6.44.00 Pm
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 10

আইন কী বলে? হেবা দলিল কি ?

কেউ যদি তাঁর সন্তানদের সম্পত্তি নিশ্চিত করতে চান, তাহলে সাবালক সন্তানদের কাছে প্রথমেই বিক্রয় করে হেবা দলিল সম্পন্ন করে নিতে পারেন। মুসলমানদের ক্ষেত্রে বিক্রয় বাদে আরও দুটি পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। একটি হলো হেবা বা দান এবং অন্যটি হচ্ছে উইল ৷ তবে অনেকেই এ দুটির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না।

দান বা হেবা করতে হয় নিঃশর্তভাবে। হেবা করার জন্য তিনটি শর্ত পুরণ করতে হয়। প্রথমত, হেবাকারীকে হেবার ঘোষণা দিতে হবে অথবা পাওয়ার অব ত্যাটর্নি বা
আমমোক্তারনামা করেও ঘোষণা দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যাকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তার দ্বারা গ্রহণ আর তৃতীয়ত, হেবা করা সম্পত্তির দখল গ্রহণ । হেবা কিংবা
দান করা সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক এবং অবশ্যই রেজিষ্টি করে নিতে হবে।

আর উইল হচ্ছে নিজের অবর্তমানে কাউকে সম্পত্তি দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা । তবে কোনো মুসলমান তাঁর দাফন-কাফনের ব্যয় ও দেনা পরিশোধের পর সম্পত্তির এক-
তৃতীয়াংশের বেশি উইল করতে পারবে না। অর্থাৎ উইলের ক্ষেত্রে পুরো সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারবেন না। যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা হয়, তাহলে সে উইল
কার্যকর করা যাবে না। তবে সম্পত্তির উইলের ক্ষেত্রে অন্য ওয়ারিশদের অনুমতি নিয়ে এর বেশিও উইল করা যাবে ।

দান সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হয়। উইল কার্ষকর হয় মৃত্যুর পর। তবে নাবালক সন্তান থাকলে দানের ক্ষেত্রে সন্তান সাবালক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে।

একজন হিন্দু ব্যক্তিও তাঁর সম্পত্তি উইল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একজন হিন্দু ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি উইল করতে পারেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালত থেকে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। প্রবেট হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে উইলের প্রমাণ । যেকোনো হেবা
বা দান লিখিত আকারে হতে হবে তা রেজিষ্জি করে নিতে হবে।

মুসলিম আইনে হেবার বিধানাবলী!

হেবা বা দান সম্পর্কে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত ও ধারণা পোষণ করে । এর অন্যতম কারণ, এ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানের অভাব বা ভাসা-ভাসা ধারণা পোষণ করা। যা বাস্তবতার নিরিখেভয়ংকর এবং কখনো অপুরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিগত আয়ের উপকরণগুলোর মধ্যে হেবাও একটি কল্যাণকর পদ্ধতি ।

হেবার কল্যাণকর বিষয় হলো, যেকোনো বিভ্তবান ব্যক্তি ব্যক্তিগত ও সামাজিকদায়িত্ব পালনের পর তার অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে তার উচিত অতিরিক্ত মূলধন
কোনো অভাবী ব্যক্তির অভাব মোচনে ব্যয় করা । সমাজে সাম্য আনার চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হেবা জীবনোপকরণের একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া ।

চাওয়া ও প্রতীক্ষা ছাড়া এক ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কিছু লেনদেন করাকেই বলে হেবা ।

নিজস্ব স্বত পরিত্যাগ করে অপর ব্যক্তির অনুকূলে অধিকার বা স্বত্ব সৃষ্টি করাকে দান বলে। অপর ব্যক্তি কর্তৃক দান গৃহীত হলেই ওই সম্পত্তিতে তার স্বত্ব সৃষ্টি সম্পুর্ণ হয়, অন্য প্রকারে নয়।

হিন্দু ও মুসলিম আইন ছাড়াও ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২২ ধারায় দানের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তির কাছে স্বেচ্ছায় এবং বিনা প্রতিদানে কতিপয় বিদ্যমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তরকে দান বলে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, বিভিন্ন আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞার মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, বিনা প্রতিদানে সম্পত্তি হস্তান্তর । যে ব্যক্তি হস্তান্তর
করেন, তিনি দাতা আর যিনি গ্রহণ করেন তাকে গ্রহীতা বলা হয়।

কোনো মুসলিম হেবা করতে পারে? তার কী যোগ্যতা থাকা উচিত। এর সরল উত্তর হলো, নাবালক নয় এমন সুস্থ মস্তিক্ষসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান হেবা বা দানের
মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন।

দানের উদ্দেশ্য :

প্রত্যেক দানের ক্ষেত্রে দাতার মনোভাব সৎ হতে হবে । কাউকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে দান করা হলে উত্তমর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ইচ্ছা অনুযায়ী তা বাতিল ঘোষিত
হতে পারে।

কী দান করা যায়:

দৃশ্যমান সম্পত্তির সঙ্গে মোকদ্দমাযোগ্য দাবি ও অশরীরী সম্পত্তি সমভাবে হেবার বিষয়বস্তু হতে পারে । যেমন:-

১. ঝণ, বিনিময়পত্র অথবা সরকারি প্রতিজ্ঞাপত্র।

২. মালিকানা অধিকার বা স্বতৃ, ভাড়া বা লিজের জমি এবং ক্রোককৃত
সম্পত্তি।

৩. পীরের দরগায় প্রদত্ত শিরনির নির্দিষ্ট অংশ ।
৪. বীমা পলিসির টাকাও দান করা চলে।

সর্বোপরি ‘মাল’ বলতে যা বোঝায় তার সবই অর্থাৎ আদায়যোগ্য দাবিসহ যেকোনো সম্পত্তি দান করা যায়।

কে হেবা গ্রহণ করতে পারে আর হেবা কে কাকে করতে পারে :

একজন মুসলিম তার সমগ্ব ভূ-সম্পত্তি যেকোনো ব্যক্তি হোক সে অমুসলিম বরাবরও দান করতে পারেন। অর্থাৎ গৃহীতার ক্ষেত্রে সাবালক, নাবালক, পুত্র, অপুত্র, স্বামী কিংবা স্ত্রী, ধনী-নির্ধন বালাই নেই, যে কাউকে দান করা যায় এবং তিনি বা তারা নির্বিবাদে দান গ্রহণ করতে পারেন।

Screenshot 2023 03 16 At 6.42.18 Pm
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 11

সীমারেখা:

মুসলিম আইন মোতাবেক একজন মুসলমান জীবদ্দশায় তার সমগ্র সম্পত্তি দান করে দিতে পারে । এমনকি তার উওরাধিকারীদের বঞ্চিত করলেও এই দান অবৈধ হবে না। তবে শুধু মরজ-উল-মউতের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। মরজ-উল- মউত হলো মরণ অসুখ যাতে মৃত্যুর খুবই সম্ভাবনা থাকে এবং যার ফলে শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে ।

মুসলিম আইনের ১৩৫ ধারা অনুযায়ী হেবা বা দানের বৈধতার জন্য দখল দানসহ যেসব শর্ত আছে, মরজ-উল-মউতের জন্যও একই শর্তাবলি প্রযোজ্য (বেঈলি, ৫৫১-৫6২) ।

  • মরজ-উল-মউত হতে হলে, নিম্নবর্ণিত উপাদান অবশ্যই থাকা দরকার । যথাঃ

১. দাতার আশু মৃত্যুর আশঙ্কা গুরুতর হতে হবে।
২. দাতার মনে প্রকৃত মৃজ্ুভয় জাগ্রত হতে হবে এবং

৩. ওই যৃত্ুভয়ের কিছু বাহ্যিক লক্ষণও, যেমন স্বাভাবিক কাজকর্মে
বা পেশায় অক্ষমতা প্রকাশ হতে হবে।

উপরিউক্ত মতে, মরজ-উল-মউতে ঘটনা ও আইন উভয় প্রশ্নই জড়িত । অসুখটি দীর্ঘস্থায়ী হলে যেমন ক্ষয়রোগ বা ‘আ্যালব্মিন্নরিয়া’য় আসন্ন যৃত্মুর কোনো আশঙ্কা থাকে না বিধায় অস্রখটি মরজ-উল-মউত নয়, তবে পরে যদি সেটি মৃত্যুকে সম্ভাবনাময় করে তুলে এবং এর ফলেই যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে অসুখটিকে মরজ-উল-মউত বলা যাবে।

Screenshot 2023 03 16 At 6.42.34 Pm
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 12

সংক্ষেপে দানটি আসন্ন মৃত্যুর আশঙ্কায় করা হলে, প্রিভি- কাউন্সিলের মতে এটি মরজ-উল-মউত বলে গণ্য হবে । তবে আবারও উল্লেখ্য যে, বার্ধক্যজনিত হঠাৎ মৃত্য মরজ-উল-মউত নয়।

  • নোট: মরজ-উল-মউত বা মরণ অসুখের সময় একজন মুসলমানের প্রদত্ত দানটি দাতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা সম্মতি প্রদান না করলে দাফন-
    কাফন ও অন্যান্য দেনা পরিশোধের পর মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক কার্যকর হবে না। প্রাসঙ্গিক বিধায় উল্লেখ্য যে দাতার ক্ষমতার এই
    সীমারেখাটি উইল বা ওসিয়তের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের সীমারেখার অন্ররূপ।

  • বৈধ দানের আবশ্যকীয় শর্তাবলি :

কোনো হেবা আইনানুগ হতে হলে অবশ্যই সেখানে তিনটি শর্ত পুরণ করতে হবে ।
সেগুলো হলো:-

১। .দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা বা প্রস্তাব (offer)।
২। দানগ্রহীতা কর্তৃক উহা গ্রহণ (Acceptance)।
৩। আলোচ্য আইনের ১৫০ ধারা অনুযায়ী দাতা কর্তৃক দানগ্রহীতাকে
দানের বিষয়বস্তুর দখল প্রদান।

এই শর্তগুলো যদি পালন করা হয়, তাহলে হেবাটি আইনানুগভাবে সিদ্ধ হবে
(বেঈলি, ৫১৫)।

রেজিস্ট্রেশান:

মুসলিম আইন অনুযায়ী হেবা লিখিত এবং রেজিষ্টি করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি হেবার ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে মালিক বা
কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নয়। তদুপরি ২০০৫ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা এবং একই সালের The Registration Act 1908–এর ১৭ ধারা সংশোধনের ফলে অস্থাবর সম্পত্তির হেবা রেজিস্টিকরণ বাধ্যতায়ুলক করা হয়েছে।

  • যেসব ক্ষেত্রে হেবা অবৈধ:

১. অজাত ব্যক্তিকে হেবা : ভূমিষ্ঠ হয়নি (unborn child) এমন ব্যক্তিকে দান করা অবৈধ । উল্লেখ্য, unborn child বরাবর দান হিন্দু আইনে শর্ত সাপেক্ষে বৈধ।

২. ভবিষ্যতের হেবা : ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে এমন কোনো কিছুর হেবা বৈধ নয় অথবা ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট কিংবা অনির্দিষ্ট তারিখে সেটি কার্যকর হবে এই মর্মে প্রদত্ত দানও অবৈধ ।

৩. দুই বা ততোধিক গ্রহীতাকে হেবা : বিভাগযোগ্য কোনো সম্পত্তি ভাগ না করে দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে দান করলে হেবাটি অবৈধ হবে, তবে প্রত্যেক দানগ্রহীতা আলাদাভাবে সম্পত্তির দখল পেলে বা পাওয়ার ব্যবস্থা করে নিলে, দানটিকে বৈধ করা যেতে পারে।

৪. দাতার বেদখলি সম্পত্তির হেবা : হেবাদাতা যতক্ষণ পর্যন্ত তার বেদখলি সম্পত্তি উদ্ধার করে দানগ্রহীতাকে তার দখল প্রদান না করবে বা দানটিকে সম্পুর্ণ করার উদ্দেশ্যে দখল লাভ করে সেটি যাতে দানগ্হীতার ক্ষমতার আওতাভুক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা অবলম্বন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দাতার বেদখলি
সম্পত্তির হেবা বৈধ হবে না।

৫. প্রতারণামূলক হেবা: পাওনাদারদের প্রতারিত করার জন্য হেবা করা অবৈধ।

৬. দানগ্রহীতার উওরাধিকারী নিয়োগের ক্ষমতা : কোনো সম্পত্তির দানগ্রহীতাকে উওরাধিকারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা মুসলিম আইনে অবৈধ ।

৭. অনিশ্চিত হেবা : দৈবক্রমে কোনো কিছু ঘটলে কার্যকর হবে এমন কোনো দান বৈধ নয়।

  • হেবার প্রকারভেদ:
  • হেবা সাধারণত দুই প্রকার, যথা:-

ক. সাধারণ হেবা (Simple Heba): যে হেবায় আদৌ কোনো প্রতিদান নেই এবং দাতা অবিলম্বে দানকৃত সম্পত্তি গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করেন ।

খ. হেবা-বিল-আ্যাওয়াজ (Heba Bil Awaz): এটি হলো কোনো রকমের মুল্য ব্যতিরেকে মালিকানা হস্তান্তর । কিন্তু হেবা-বিল-আ্যাওয়াজ হলো মুল্যের বিনিময়ে হেবা । হেবা বা দানের রকমের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ ব্যতিক্রম। প্রকৃতপক্ষে এবং দৃষ্টত এটি বিক্রয় সমতুল্য (as good as sale) | এতে ক্রয় চুক্তির যাবতীয় উপাদানই বিদ্যমান। যা হোক, এই দানটিকে বৈধ করতে হলে দুটি শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে, যথা:-

ক. দানথহীতা কর্তৃক বিনিময় মুল্য প্রকৃত বা বাস্তবিক পক্ষেই দিতে হবে।

খ. দাতার মালিকানা পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।

হেবা-বিল-আ্যাওয়াজের বিনিময়ের পর্যাপ্ততা (Adequacy of Consideration) সম্পর্কে মুসলিম জুরিস্টদের মত হলো, বিনিময়ে প্রাপ্ত মুল্যের মান, প্রদত্ত বস্তুর সঙ্গে তুলনায়ুলকভাবে কম হলেও ত্যাওয়াজটি বেআইনি হবে না। এমনকি একটি পবিত্র কোরআন কিংবা জায়নামাজ ও একটা “তসবিহ’ হেবা-বিল-আ্যাওয়াজের জন্য উত্তম বিনিময় (Consideration)। তবে এর মান যাই হোক না কেন, কার্যত এটি পরিশোধ করতে হবে, শুধু মুখে বললেই হবে না।

Screenshot 2023 03 16 At 6.44.25 Pm
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 13

কখন হেবা বাতিল বা রদযোগ্য (Revocation of gift) :

কতিপয় বিশেষ অবস্থা ব্যতীত আর সব ক্ষেত্রেই হেবা বা দান রদযোগ্য । কিন্তু কোনো অবস্থায়ই হেবা-বিল-আ্যাওয়াজ রদযোগ্য নয় । মুসলিম আইনের ১৬৭ ধারা
অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত অবস্থায় দাতা হেবা বা দান বাতিল করতে পারেন।

১. দখল প্রদানের আগে যেকোনো সময় দাতা হেবা রদ করতে পারে । কারণ দখল প্রদানের আগে হেবাটি পুর্ণভাবে কার্যকর হয় না।

২. উপধারা (৪)-এর বিধানাবলি সাপেক্ষে, নিয়লিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত, আর সব ক্ষেত্রেই দখল অর্পণের পরও দান রদ করা যেতে পারে:-

ক. স্বামী স্ত্রীকে বান্ত্রী স্বামীকে যখন কোনো কিছু হেবা করা হয়।

খ. দাতার সঙ্গে দানগ্রহীতা যখন নিষিদ্ধ ধাপের মধ্যে সম্পর্কিত হবে ।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শিয়া আইনের নিষিদ্ধ ধাপয়ুক্ত হোক আর না হোক, রক্ত সম্পর্কের যেকোনো আত্রীয়কে প্রদত্ত দানটি দখল অর্পণের পর বাতিলযোগ্য নয়।

গ. দানগ্রহীতা যখন মারা যাবে ।

ঘ. যখন হেবার বস্তুটি বিক্রয় হেবা বা অন্যভাবে দানগ্রহীতার দখলবহির্ভূত হবে।

ঙ. হেবার বস্তুটি যখন হারিয়ে যাবে বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। যেকোনো কারণেই হোক, যখন হেবাকৃত বস্তুর মুল্য বৃদ্ধি পাবে।

ছ. যখন হেবার বস্তুটি এমনভাবে রূপান্তরিত হবে যে এর আসল আকৃতি শনাক্তযোগ্য থাকবে না, যেমন:- যখন গম পিষানোর পর আটায় রূপান্তরিত হয়।

জ. যখন দাতা হেবার বিনিময়ে আযাওয়াজ গ্রহণ করবে ।

৩. হেবাদাতাই শুধু হেবাটি বাতিল করতে পারেন। দাতার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা এটি বাতিল করতে পারবে না। অর্থাৎ দান রদে বা বাতিলে
গ্রহীতার ইচ্ছা নহে, দাতার অভিপ্রায়ই মুখ্য এবং প্রযোজ্য।

৪. একবার দখল অর্পিত হলে, আদালতের ডিক্রি ব্যতীত অন্য কিছুতেই হেবাটি রদ হবে না। দাতা কর্তৃক দান রদের ঘোষণা বা দান রদের মামলা দায়ের
করলেই দানটি রদ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দাতা দান রদের ডিক্রি না পাবেন।

হেবার জন্য লিখিত কাগজের প্রয়োজন নেই। হেবাকৃত সম্পত্তি নামজারি করতে হলে দখল, স্থানীয় তদন্ত ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হেবা সম্পর্কে নিশ্চিত
হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নামজারি করতে পারেন । দখল হস্তান্তরের উত্কৃষ্ট প্রমাণ নামজারি । দলিলে হস্তান্তরের বিষয়টি উল্লেখ করলেও তা দখল হস্তান্তরের প্রমাণ নয়।

জনৈক রফিকুল্লাহ তার ছেলের স্ত্রী নুরজাহান বেগমকে ১৯১৬ সালে লিখিত দলিলের মাধ্যমে একটি সম্পত্তি হেবা করেন। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত জমিটি মিউটেশন
হয়নি। মিউটেশন প্রসিডিং চলাকালে রফিকু্লাহ মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিষয়ে কোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করে যে হেবা করা হয়েছে, গ্রহীতা সম্মতি দিয়েছে; তবে দখল
হস্তান্তরের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। হেবা করার পর রফিকুল্লাহ জমিটির দখলে ছিল এবং গ্রহীতা দুরে থাকার কারণে বাস্তব দখল গ্রহণ সম্ভব ছিল না। কোর্ট সিদ্ধান্ত
প্রদান করে যে হেবাটি সম্পন্ন হয়নি বিধায় তা বাতিল।

লিখিত দলিল ও রেজিস্ট্রি দলিল ছাড়া হেবা করা যায় কি? :

করারও প্রয়োজন নেই । তবে লিখিত দলিল থাকলে বা রেজিস্ট্রি করলে তা প্রমাণে সহজ হয়। তবে দানের ক্ষেত্রে লিখিত দলিল এবং তা রেজিস্ট্রি করা প্রয়োজন ।

  • হেবাকৃত সম্পত্তি ভাড়াটিয়ার দখলে থাকলে তার দখল কিভাবে হস্তান্তরিত হবেঃ:

এ ক্ষেত্রে দাতা যদি ভাড়াটিয়াকে সম্পত্তির ভাড়া গ্রহীতা বরাবর প্রদানের অনুরোধ করে বা জমির মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র গ্রহীতাকে দিয়ে দেয়, অথবা
গ্রহীতা বরাবর নামজারি করা হয়। তবে দখল হস্তান্তরিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

হেবাকারী ও গ্রহীতা যদি দানকৃত সম্পত্তিতে যৌথভাবে বসবাস করে, তবে

দখল কিভাবে হস্তাত্তরিত হবেঃ:

এ ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক দখল হস্তান্তর সম্ভব নয় এবং প্রয়োজনও নেই । দাতা যদি এমন কোনো কাজ করেন, যা থেকে তার দখল হস্তান্তরের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়,
তাহলেই দখল হস্তান্তর হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে । নামফলক পরিবর্তন, নামজারি, তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন।

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হেবা করার নিয়ম কী?:

দাতা ও গ্রহীতা দানকৃত সম্পত্তিতে বসবাস করলে কিভাবে দখল হস্তান্তর বোঝানো হয়, তা আগের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দান করলে
একই নিয়মে দখল হস্তান্তর বোঝাতে হবে । যদি সম্পত্তি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, দানের পর স্ত্রীর পক্ষে স্বামী ভাড়া আদায় করে থাকবেন।
স্বামী যদি অস্থাবর সম্পত্তি অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রীকে রেজিস্টার্ড দলিল-মুলে দান করে যে স্ত্রী ভালো-মন্দ বুঝতে পারে-এরূপ দান বৈধ ।

নাবালককে দান করলে কিভাবে হস্তান্তরিত হবেঃ:

নাবালকের পক্ষে তার অভিভাবকের কাছে দখল হস্তাত্তরিত হলে দান সম্পন্ন হবে। নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হচ্ছে তার বাবা । বাবার অবর্তমানে বাবা কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি, তাদের অবর্তমানে দাদা বা দাদা কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি।

  • বাবা বা অভিভাবক কর্তৃক নাবালককে দান করলে দখল কিভাবে হস্তান্তর করতে হয়?: এ ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরের প্রয়োজন নেই । দান করার ইচ্ছা এবং ঘোষণাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট।
  • যে সম্পত্তি বিভাজন করা যায় না, তা একাধিক ব্যক্তিকে দান করা যায় কিঃ:

যেহেতু দানের জন্য দখল হস্তান্তর একান্ত প্রয়োজন, কাজেই বিভাজন করা যায় নাবা সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত স্ববিধাদি বিভাজন করা যায় না-এমন সম্পত্তি একাধিক
ব্যক্তিকে দান করা যায় না।

  • ভবিষ্যতে বিক্রি করতে পারবে না-এমন শর্ত যুক্ত করে দান:

ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি একটি সম্পত্তি দান করলেন এবং শর্তযক্ত করে দিলেন যে ভবিষ্যতে গ্রহীতা সম্পত্তিটি বিক্রি করতে পারবেন না বা নির্াষ্টি কোনো ব্যক্তির
কাছে ভাড়া দিতে পারবেন না এবং এমন অন্য কোনো শর্ত যুক্ত করে দিলেন। এ ক্ষেত্রে দানটি সম্পন্ন হয়েছে, তবে শর্তগুলো বাতিল বলে গণ্য করতে হবে।

  • দখল হস্তান্তর ও দান:

ক. দখল হস্তান্তর করা হয়নি, কিন্তু যদি দানকারী এই দান পরে স্বীকার করে, তবে দানটি অকার্যকর বা অবৈধ হবে না।

খ. দখল হস্তান্তরের আগে যেকোনো সময় দান বাতিল করা যায়।

গ.নিষিদ্ধ সম্পর্কের ব্যক্তি বরাবর করা দান দখল হস্তান্তরের পর বাতিল করা যাবে না । দখল হস্তান্তরের পর শুধু কোটেব্র ডিক্রির মাধ্যমে দান বাতিল হতে পারে।

ঘ. গ্রহীতার সম্মতি প্রয়োজন-এমন নির্দেশনা দানের দলিলে থাকা সত্তেও নিয়েছে; দানটি বৈধ।

ঙ. দানকৃত সম্পত্তির দখল তাত্ক্ষণিক হস্তান্তরের নিয়ম থাকলেও দানকারী দানকৃত সম্পত্তিতে তার জীবনকালে ভোগদখলের শর্ত যুক্ত করলে দান অবৈধ হবে না।

উইল কি?:

উইল (testament) বা অছিয়ত হলো ভবিষ্যৎ দান। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা সম্পত্তির মুনাফা কিভাবে বিলি-বন্টন করা হবে তা তার
মৃত পূর্বেই লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারণ করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষণাই হলো উইল বা অছিয়ত। ইসলামী আইন অনুযায়ী উইলকে অসিয়ত বলে। হিন্দু ও খ্রিস্টান আইনে উইলের বিধান আছে, তবে এগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত কিছু পার্থক্য
রয়েছে।

  • উইলের শর্ত:

উইল করা যায়,

(ক) ব্যক্তির উদ্দেশ্যে এবং

(খ) ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ।

ব্যক্তির উদ্দেশ্যে উইল আবার দু’প্রকার, যথা:-

Screenshot 2023 03 16 At 6.45.16 Pm
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 14

(১) ওয়ারিশের বরাবরে উইল এবং

(২) ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল।

  • ওয়ারিশের বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধান: (ক) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল বাতিল বলে গণ্য হবে। অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পুর্ণ কার্যকরী হবে। ওয়ারিশদের সম্মতি কার্যকর হবে উইল দাতার মৃত্যুর পর।
  • ওয়ারিশের বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধান:

(ক) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।
(খে) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পুর্ণ কার্যকরী হবে।
(গে) ওয়ারিশদের সম্মতি কার্যকর হবে উইল দাতার মৃত্যুর পর।

  • ওয়ারিশের বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধান:
    (ক) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।
    (খ) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পুর্ণ কার্যকরী হবে।
    (গ) ওয়ারিশদের সম্মতি কার্যকর হবে উইল দাতার মৃত্যুর পর।
  • ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তি বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধান:
    (ক) ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পূর্ণ কার্যকরী হবে ।

(খ) ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল দাতার নিট সম্পত্তির ১/৩ এর উপর উইল কার্যকরী হবে।

  • নিট সম্পত্তি:
    উইলদাতার মোট সম্পত্তি হতে নিন্মবরূপ ব্যয় পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি

নিট সম্পত্তি বলে গণ্য হবে, উইল সর্বদা নিট সম্পত্তির উপর প্রযোজ্য হবেঃ

কে) উইল দাতার মৃত্যুর অব্যবহিত ৩ মাস পূর্বের ভৃত্য বা চাকরের পাওয়ানাদি।

(খে) মৃত্যু শয্যাকালীন খরচাদি।

গ) মৃত্যুর পর দাফন-কাফনের খরচ।

(ঘ) শ্ত্রীর দেন-মোহরের পাওয়ানা পরিশোধ ব্যয়।

(য়) উইল প্রবেট এবং সাকসেশন সার্টিফিকেট ব্যয়।

(চ) খণ পরিশোধ (আগের খণ আগে পরিশোধ ভিত্তিতে)।

ছে) খণ পরিশোধের আগে স্ত্রীর দেন-মোহর পরিশোধ করতে হবে।

ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল:

ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল করা হলে তাতে ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে সে উইল সম্পুর্ণ কার্যকর হবে, আর ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে অছিতকারীর নিট সম্পত্তির
১/৩ অংশের উপর উইল কার্যকরী হবে।

ধর্মীয় উইল ৩ প্রকার:

যথা-

ক। ফরজ কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- হজ্জ পালন, যাকাত প্রদান ইত্যাদি।
খ। ওয়াজিব কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- ফিতরা প্রদান, কোরবানী করা ইত্যাদি।

গ। নফল কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- সরাইখানা, রাস্তা-পুল, এতিমখানা নির্মাণ ইত্যাদি।

উইলের উপাদান:

(১) একই সম্পত্তি নিয়ে একাধিক উইল করা হলে সর্বশেষ উইলটি সর্বপ্রথম কার্যকরী হবে এবং সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকা সাপেক্ষে পরবর্তী উইলগুলো
কার্যকরী হবে।

(২) অজাত ব্যক্তি উইলের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে জন্মঘহণ করলে তার বরাবরে করা উইল বৈধ হবে ।

(৩) উইল মৌখিক ও লিখিত দু’ভাবেই করা যায়। এমনকি অসামথ্যেব কারণে ইঙ্গিতেও করা যায়। তবে মৌখিক উইলের ক্ষেত্রে ২ জন পুরুষ বা ১ জন প্ররুষ ও ২ জন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতিতে হতে হবে।

(8) নাবালক উত্তরাধিকারী সাবালকতৃ লাভের পর উইলে সম্মতি দিতে পারবেন।

(৫) উইল দাতা মৃত্যুর পুর্বে যে কোন সময় উইল বাতিল করতে পারেন। সম্পত্তি একবার উইল করার পর প্রুনরায় তা অন্য কারো অনুকূলে উইল করলে পুর্বের উইলটি স্বয়তক্রীয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। উইল বাতিলের জন্য মামলার প্রয়োজন হয় না।

(৬) ১৮৭০ সনের হিন্দু আইন অনুসারে একজন হিন্দু তার সকল সম্পত্তি বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রেখে বাকী সম্পত্তি উইল করতে হবে।

(৭) উইলকারীর কোন উত্তরাধিকারী না থাকলে তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে উইল করে দিতে পারেন।

(৮) উইল গ্রহণকারীকে দাতার মৃত্যুর সময় জীবিত থাকতে হবে।

(৯) উইলকারী মৃত্যুর মুহূর্ত হতে উইল কার্যকর হবে।

উইল বাতিল

নিন্মোক্ত কারণে উইল বাতিল বলে গণ্য হবেঃ

১) উইলের পর উইলদাতা বিকৃত মস্তিষ্ক হলে, মৃত্যুর পুর্বে তিনি সুস্থ হলেও ।

(২) উইল গ্রহীতা দাতার আগে মারা গেলে ।

(৩) উইল দাতা বা গ্রহীতা ধর্ম ত্যাগ করলে

(8) উইল গ্রহীতা দাতাকে হত্যা করলে ।

৫) উইলকৃত সম্পত্তির উপর অন্য কারো অধিকার সাব্যস্ত হলে ।

(৬) উইলকারী উইলকৃত সম্পত্তি বিক্রি বা দান করলে বা তাতে বাড়ি তৈরি করলে।

উইল প্রবেট:

উইল বা অছিয়তের মাধ্যমে হিন্দ্র সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে তার সম্পত্তি উইল করে গেলে উইলটি বাস্তবায়নের জন্য
সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারবান দেওয়ানি আদালতের অনুমোদন লাগবে, এরূপ অনুমোদন নেয়াকেই বরে উইল প্রবেট। প্রবেট মুসলিম উইলে আবশ্যকীয় নয় । প্রবেটের জন্য আদালতে আবেদন করা হলে অপরাপর ওযারিশদের মতামত জানার জন্য আদালত হতে নোটিশ দেয়া হয়, এ সময় ওয়ারিশগণ উইলের বিরুদ্ধে অসম্মতি জানাতে পারেন। এছাড়া আদালত কালেক্টরের নিকট সম্পত্তির কোর্ট ফি সঠিক আছে কিনা, সম্পত্তিটি সরকারের কিনা, সম্পর্তিটি উইলদাতার কিনা এতে আর কারো স্বার্থ আছে কিনা ইত্যাদি জানতে চেয়ে থাকেন।

ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল:

ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল করা হলে তাতে ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে সে উইল সম্পুর্ণ কার্যকর হবে, আর ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে অছিতকারীর নিট সম্পত্তির
১/৩ অংশের উপর উইল কার্যকরী হবে ।

দান ও উইলের পার্থক্য:

€১) দান সাথে সাথে কার্যকর হয়, উইল কার্যকর হয় অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর।

(২) দান সম্পন্ন হওয়ার পর আদালতের রায় ব্যতীত তা আর প্রত্যাহার করা যায় না। কিন্তু উইল ইচ্ছেমত বাতিল করা যায়।

(৩) দান করার সময় দানের সম্পত্তিতে দাতার মালিকানা ও দখল থাকতে হবে অন্যদিকে মৃত্যুর পুর্বে পাওয়া যাবে এরূপ যে কোন সম্পত্তি উইল করা যাবে।

আপনার সম্পতিত যেভাবে উইল বা অছিয়ত করবেন।

হক সাহেব অনেক দিন যাবত রোগে ভুগছেন । তার তিন বিঘা পরিমাণ জমি আছে। তা দিয়ে তার সংসার ভালই চলতো । তার ভাইয়ের ছেলে আলতাফ তাকে
দেখাশোনা করে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, সেবা-শুশ্রষা করে ।

হক সাহেব আলতাফের প্রতি তার সম্পত্তি আলতাফকে অসিয়ত করে দিতে চান।
কিন্তু মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি অসিয়ত করতে পারবে না। তাই তার জমি থেকে এক বিঘা আলতাফকে একটি অসিয়ত দলিলের মাধ্যমে অসিয়ত করে দিলেন। কয়েক মাস পর আলতাফ হক সাহেবের স্ত্রীর গহণা চুরি করে বাজারে বিক্রি করে দিল।

হক সাহেব খুব দুঃখ পেলেন। রাগে দুঃখে আলতাফকে দেয়া অসিয়ত বাতিল করার জন্য অন্য এক জনের নামে একই জমি পুনরায় অসিয়ত করে দিলেন । আলতাফের নামে আগে করে দেয়া অসিয়ত আর বহাল থাকলো না কারণ সর্বশেষ অসিয়ত বহাল হয়। অসিয়ত যে কোন সময় বাতিলও করা যায়।

কোন মৃত ব্যক্তি কর্তৃক মৃত্যুর আগে তার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থা করার জন্য যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তা উইল ৷ কোন মুসলমান ইসলামি আইন অনুযায়ী এরূপ কোন
ইচ্ছাপত্র দিলে তাকে অছিয়ত বলে । উইল এবং অসিয়ত একমাত্র দলিল যা রেজিক্ট্ক রার দরকার হয় না।

কোন অসুবিধা না হয় সে জন্য উইলকারী কর্তৃক উইল বাতিল করার বিধান আছে। দান বা হেবা সম্পন্ন হলে হেবা বা দানকারীর হেবা বা দান বাতিল করার কোন
অধিকার থাকে না। একই সম্পত্তি একাধিক ব্যক্তিকে উইলকারী তার জীবদ্দশায় উইল করতে পরেন।

সর্বশেষ যার নামে উইল করা হয় উইলকারীর মৃত্যুর পর সেই উইলকৃত সম্পত্তির মালিক হয়। হেবা বা দানের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যার নামে হেবা বা দান করা হবে সেই সম্পত্তির মলিক হবে। হেবার ক্ষেত্রে হেবাকৃত সম্পত্তির দখল হস্তান্তর না হলে হেবা সম্পন্ন হয় না। কিন্তু উইলের ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তর না করলেও উইল বৈধ ।

উইল বা অসিয়ত রেজিস্থি করার প্রয়োজন পড়ে না, রেজিস্টশন আইনের ১৮ ধারামতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সাব-রেজিস্থি অফিস আবেদন করলে উইল সম্পর্কিত রেজিষ্টার অন্তর্ভুক্তি করানো যায়। কোন হিন্দু ব্যক্তি তার সমুদয় সম্পত্তি যে কোন ব্যক্তিকে উইল করতে পারেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালত হতে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। প্রবেট “জুডিশিয়াল কনফারমেশন। মুসলমানদের অসিয়ত প্রবেট করার দরকার হয় না।

একজন মুসলমান তার সমুদয় সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উত্তরাধিকার নয় এমন কাউকে উইল করতে পারে না। তবে উত্তরাধিকারদের মধ্যে
মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উইল করতে পারে । ১৯৯৬ সালের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ মোতাবেক আইনত বৈধ ।

সুতরাং অছিয়ত হলো আরবী শব্দ। যার অর্থ ভবিষ্যৎ দান। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কেমন করে বন্টন করা হবে তাতার মৃত্যুর পুর্বে লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারন করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষনাই হলো অছিয়ত।

অছিয়ত এর বৈশিষ্ট :

১। অছিয়ত নামা অছিয়ত কারীর মৃত্যুর পর কার্যকারী হয়।

২. মুসলীম শরীয়ত মতে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি অছিয়ত করা যায় না।

৩. উইলকে মুসলীম শরীয়তে অছিয়ত নামা বলে ।

৪। এক্সিকিটর ( Executor) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির যথাযথ বন্টন করার পদক্ষেপ নেন।

৫. অমুসলীমগন অছিয়ত এর যায়গায় উইল লিখে এর নমুনা ব্যবহার করতে পারেন।

৬. অছিয়ত নামা রেজিষ্তি করার প্রয়োজন নেই। তবে অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট জেলা জজ আদালতে দাখিল করে প্রবেট করাতে হবে।

অছিয়তের শর্তঃ

১. অছিয়তকারী তার সকল সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশি অছিয়ত করতে পারবেন না।

২. অছিয়ত, অছিয়ত দাতার যৃত্যুর পর কার্যকারী হয়।
৩. সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন যে কোন সাবালক ব্যক্তি উইল করতে পারেন।
৪. অছিয়তকারীর ইচ্ছা সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে নির্ণয়যোগ্য হতে হবে।
৫. অছিয়ত যে কেউ গ্রহন করতে পারেন।

যাদের উদ্দেশ্যে অছিয়ত করা যায় :
১. ব্যক্তির উদ্দেশ্যে
২. ধর্মীয় উদ্দেশ্যে
৩. ব্যক্তির উদ্দেশ্যে।

উইলের জন্য ইসলামী আইনে নির্দিষ্ট কোন ফরম নেই । মুসলিমের উইল লিখিত না হলেও চলে, মৌখিক উইলও আইনগতভাবে সিদ্ধ। তবে সংগত কারণে প্রায়
সবক্ষেত্রে উইল লিখিত হয়ে থাকে । লিখিত না হলে অসুবিধা অনেক । মুখের কথার উপর সত্য প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন। উইল লিখিত হলে যে স্বাক্ষরিত হতে হবে এমন কোন কথা নেই। স্বাক্ষরিত হলে প্রত্যায়িত হওয়া আবশ্যক নয় ।

উইলকারীর অভিপ্রায় বুঝতে পারা গেলেই যথেষ্ঠ । মৃত্যুকালে একটি চিঠি লিখে সম্পত্তির বিন্যাস সম্পর্কে নিদেশ দিয়ে গেলে সেই চিঠি উইলরূপে গন্য হতে পারে ।

লেখা সম্ভব না হলেও, শুধুমাত্র ইশারা বা ভঙ্গীর মাধ্যমে উইল সৃষ্টি করা যায়। নজির রয়েছে, মৃত্যুর সময় এক ব্যক্তি কথা বলতে অক্ষম হয়ে পড়ে। মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তির কি ব্যবস্থা হবে তা সে অংগভংগি দ্বারা বুঝিয়ে দেয়। সে কি বলতে চায় তা সকলে বুঝতে পারে । এখানে আইনসংগত উইল সৃষ্টি হয়েছে।

মুসলিমের উইল প্রত্যায়িত হওয়া অনাবশ্যক। কারণ কুরআন শরীফে সাক্ষ্য সম্পর্কে যে কথা আছে তা নির্দেশযুলক নয়, উপদেশযুলক | উইলের জন্য স্বাক্ষরের দরকার নেই, এমন কি সত্যায়িতও নয় । মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ উইল অস্বীকার করলে তা
প্রমাণের জন্য দুজন স্বাক্ষী পেশ করতে হবে ।

  • বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে উইল সম্পকিত বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে ।
Screenshot 2023 03 17 At 12.47.56 Am
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 15

উদাহরণ-১। সাজ্জাদ সাহেবের এর পুত্র ও কন্যা আছে। তিনি উইল করে ২৫,০০০ টাকা তার কনিষ্ঠ পুত্রকে এবং আরও ২৫,০০০ টাকা রহিম নামে একজন
অনাত্বীয়কে দান করেন । তিনি ৭৫,০০০.০০ টাকার নীট সম্পত্তি রেখে মারা যান। সাজ্জাদ সাহেবের মৃত্যুর পর তার জ্ঞেষ্ঠপুত্র ও কন্যা উইল কার্যকরী করতে অস্বীকার করল।

সমাধান: কনিষ্ঠ পুত্রের অনুকূলে ২৫,০০০ টাকার সম্পত্তি উইলের মাধ্যমে দান বৈধ হবে। যদি অবশিষ্ট উত্তরাধিকারীগন তা উইলদাতার মৃত্যুর পর অনুমোদন করে।

প্রশ্নমতে জ্যেষ্ঠপৃত্র ও কন্যা উইলটি অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছিল । সুতরাং কনিষ্ঠ পুত্রের অনুকূলে উইলটি বাতিল হবে একজন অনাত্বীয় রহিম উইলের মাধ্যমে ২৫,০০০ টাকা পেয়েছে। তার প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ উইলদাতার কাছে সম্পত্তির ৭৫,০০০ টাকার এক তৃতীয়াংশের অধিক নয় । সুতরাং উইলটির দান বৈধ হবে।

উদাহরণ-২। রহিম মিয়া মৃত্যুর আগে তার স্ত্রীর অনুকূলে ২০০০ টাকার একটি উইল করে যান। মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র উক্ত উইলে তাদের সম্মতি দেয় কিন্তু তার
দুই মেয়ে এতে সম্মতি দেয় নাই। রহিম মিয়া তার স্ত্রী, দুই পুত্র এবং দুই কন্যা ৩,০০০ টাকার আদত মুল্যের সম্পত্তি রেখে মারা যান।

সমাধান: এ উইলটির কোন আইনগত মুল্য নাই। কারন, রহিম মিয়া তার সব ওয়ারিশদের সম্মতি ছাড়াই এক তৃতীয়াংশের অধিক সম্পত্তি তার স্ত্রীর সপক্ষে উইল
করেছে। রহিম মিয়ার সম্পত্তি ৩,০০০.০০ টাকার মধ্যে তার স্ত্রীর অনুকূলে ২,০০০ একটি উইল করেছেন, যাতে তার পুত্র সম্মতি দিলে ও দুই কন্যা সম্মতি প্রদান করেন নাই । অতএব উইলটি বৈধ নয়।

উপরোক্ত উদাহরণ থেকে বিষয়টি বোঝা গেল যে, উত্তরাধিকারীদের সম্মতি প্রকাশ্য বা পরোক্ষও হতে পারে । যেইক্ষেত্রে দেখা যায় যে, উত্তরাধিকারীগন প্রায় ৭৫
বৎসর যাবৎ উইলটি চ্যালেঞ্জ করেন নাই, সেক্ষেত্রে তারা এতে পরোক্ষভাবে সম্মতি দিয়েছেন বলে গন্য হয়। সম্মতি প্রদানকারী উত্তরাধিকারীগণকে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং
বোধশক্তি সম্পন্ন হলেই চলবে এবং তারা দেউলিয়া হলেও তাতে কিছু আসে যায় না । তবে মনে রাখতে হবে, কোন মুসলিম তার অন্যান্য ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে কেবলমাত্র একজন ওয়ারিশ বরাবরে উইল করতে পারেনা |

উইলকারী কর্তৃক উইলটি শর্ত সাপেক্ষে হলে তা উইলের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে | যদি কোন
উইলকারী তার মৃত্যুর সময় জন্মগ্রহন করেনি এমন কোন ব্যক্তির বরাবরে উইল করে, তবে উক্ত উইল বৈধ হবে না। কিন্তু উইল করবার দিন হতে ৬ মাসের মধ্যে ভুমিষ্ট হলে মার্তৃগর্ভের সন্তানের বরাবর উইল বৈধ বলে গণ্য হবে । উইলদাতা ভবিষ্যতে পাবে এমন কোন সম্পত্তি উইল করতে পারে না।

এছাড়া মুসলিম আইনের বিধান মতে, কোন ভাবী উত্তরাধিকারীকে উইল করা যায়না । যদি কেউ উইল করবার সময় উত্তরাধীকারী থাকে এবং উইলদাতার মৃত্যুর
সময় যদি না থাকে, তাহলে একে সম্পত্তির ১/৩ অংশ উইল করা হলে তা বৈধ হবে। আবার যদি কেউ উইল করার সময় ওয়ারিশ না থাকে, কিন্তু উইল দাতার মৃত্যুর সময়ে ওয়ারিশে পরিণত হয়, তাহলে সে উইলমুলে কোন সম্পত্তি পাবেনা ।

নীচের উদাহরণ দেয়া হলো:

করিম মিয়ার একটি ভাই ও বোন আছে। করিম তার ভাইকে কিছু সম্পত্তি উইল করলো । করিমের জীবিতকালেই তার একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলো ।
এমতাবস্থায় ফারায়েজ অনুসারে ভাই আর ওয়ারিশ হলো না । সুতরাং ভাইয়ের বরাবর উইলটি বৈধ বলে গন্য হবে। রহিমের ভাই ১/৩ অংশ পর্যন্ত উইলের বলে
দাবী করতে পারবে । করিমের পুত্র সন্তানটি জন্য্রহণ না করলে তা বৈধ হত না। কারণ ভাই মৃত ব্যক্তির পুত্র সন্তান বা পিতা না থাকলে ভাবী ওয়ারিশ থেকে যেত।

এধরনের উইল আইনবিরোধী হবে । তবে উইল করবার সময়ে যদি কেউ ওয়ারিশ না থাকে, তাহলে উইলে তার অংশ বৈধ থেকে যাবে । বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য

হান্নান সাহেবের এক পুত্র, স্ত্রী এবং পিতৃহীন এক পৌত্র আছে। হান্নান তার সম্পত্তির ১/৩ অংশ পৌত্রকে অর্থাৎ নাতিকে উইল করলো এমতাবস্থায় উইল বৈধ
হবে, কারণ পুত্র বতর্মানে কোন মৃত পুত্রের পুত্র অথাৎ পৌত্র সম্পত্তি প্রাপ্ত হয়না। আবার ১৯৬১ সালের ১৫ই জুলাই এর পরে হান্নান মারা গেলে তার আগে মৃত পুত্রের পুত্র ওয়ারিশ হবে এবং পৌব্রের বরাবরে উইল বৈধ হবেনা । অতএব উপরোক্ত আলোচনায় বিচায বিষয় হচ্ছে যে, উইলের সময় কে ওয়ারিশ হবে বা না হবে তা নির্ণয় করতে হবে উইলদাতার মৃত্যুর পর। কোন মুসলিম অমুসলিমের অনুকূলে অনুরূপ কোন অগসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তির অনুকূলে উইল করতে পারে ।

উইলে বিকল্প অর্পণ:

একটি বিকল্প উইল বা উইলে বিকল্প অর্পণ বৈধ । এক ব্যক্তি তার কন্যার বরাবরে উইলে সম্পত্তি প্রদান করলো এবং তার মৃত্যুর সময় কন্যা মৃত থাকলে কন্যার
সন্তানগণ সম্পত্তি পাবে ।

এই ধরনের উইল বৈধ এবং কন্যার মৃত্যুর কারণে তার সন্তানগণ উইল মূলে সম্পত্তি প্রাপ্ত হবে। যেমন অপুত্রক কোন রাশেদ মেনন তার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশটি উইলে এভাবে দান করলো, “আমার কোন পুত্র সন্তান হলে এবং সে আমার মৃত্যুকালে জীবিত থাকলে, আমার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশটুকু তাকে দেবে, কিন্তু যদি & পুত্র আমার জীবদ্দশায় কোন পুত্র সন্তান রেখে মারা যায় এবং উক্ত পৌত্র যদি আমার মৃত্যুকালে জীবিত থাকে তাহলে আমার নির্বাহকগণ সম্পত্তির উক্ত অবশিষ্টাংশটি দান হিসেবে প্রয়োগ করবে ।

উইলকারী কোন পুত্র না রেখেই মারা গেল, স্থির হয় যে দানটি ভবিষ্যত শর্তযুক্ত নয়। এটি একটি বিকল্প দান। তাই অবশিষ্টাংশটুকু দান হিসেবে ব্যবহৃত হবে ।

উইলের নিবার্থক:

উইলকারী স্বীয় ইচ্ছামত উইলের নিবার্ক নিযুক্ত করতে পারেন। কোন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য যাকে নিয়োগ করেন তাকে ওসী বা নির্বাহক বলে । কোন ব্যক্তি নির্বাহক নিযুক্ত না করে মারা গেলে আদালত একজন নির্বাহক নিযুক্ত করেন। নিবারক নারী পুরুষ উভয়ই হতে পারে ।
একজন মুসলমান তার উইলের নির্বাহক হিসেবে একজন স্রীষ্টান, হিন্দ্রু বা কোন

অমুসলমানকে নিযুক্ত করতে পারেন । একাধিক ব্যক্তি নির্বাহক নিযুক্ত হলে প্রত্যেককেই যৌথভাবে কাজ করতে হবে ।

উইলের প্রবেট:

কোন উইল সরকারীভাবে কায়েম করতে হলে আদালতের কাছ হতে যে স্বীকৃতি নিতে হয় তাকেই প্রবেট বলে। প্রবেট ছাড়া আদালত উইল গ্রহণ নাও গ্রহন করতে
পারেন। একজন মুসলমান কর্তৃক সম্পাদিত উইল যখন যথাযথ প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হবে, তখন কোন প্রবেট লাভ না করলেও তা সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে।

উইল রদ বা প্রত্যাহার করণ:

মুসলিম আইনের বিধান মতে তার কৃত উইল প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারে । উইলকারী তার জীবদ্দশায় যে কোন সময় তার কৃত উইল প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারে । কারন এটি তার জন্য বাধ্যতামূলক চুক্তি নয় এবং এর গ্রহন তার মৃত্যুর পরেই অনুষ্ঠিত হয় । গ্রহণের আগে তা কার্যকরী হয় না । সুস্পষ্ট বাক্য দ্বারা বা কার্যকালের মাধ্যমে উইল প্রত্যাহার করা যায়।

এছাড়া উইল গ্রহীতা উইলদাতার আগেই মারা গেলে উইল গ্রহীতা যদি উইলকারীর আগেই মারা যায় উইলটি বিলুপ্তি হবে এবং উইলকৃত সম্পত্তি উইল দাতার সম্পত্তিতে পরিণত হবে।

আইন অধিকার : দলিল ও রেজিস্ট্রি বলতে যা বুঝায়-

২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তাত্তরযোগ্য দলিল রেজিস্টেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যে দলিল রেজিস্ট্রেশন
বাধ্যতামূলক অথচ রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি, তখন সেই দলিল নিয়ে আপনি কোনো দাবি করতে পারবেন না। সাব-কবলা দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধকি দলিল, বায়না দলিল, বন্টননামা দলিলসহ বিভিন্ন হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্টি করতে হবে ।

দলিলের বিষয়বস্তু যে এলাকার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই এলাকার সাব- রেজিষ্টি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে ।

জমি বিক্রির দলিল রেজিষ্টি:

জমি বিক্রির জন্য জমির বায়নানামা (বিক্রির চুক্তিপত্র) সম্পন্ন করা হলে তা রেজিষ্টি করতে হবে । জমির বায়নানামা সম্পাদনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে
বায়নাটি রেজিস্ট্রি করতে হবে । আর শর্ত অনুযায়ী বায়নার চুক্তি অনুযায়ী রেজিষ্টি করার সব পদ্ধতি মেনে সাব-কবলা দলিলটি সম্পাদিত হলে সম্পাদনের পর থেকে তিন মাসের মধ্যে সাব-কবলা দলিলটি রেজিষ্টি করাতে হবে ।

আইন অনুযায়ী, তিন মাস পার হয়ে গেলে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। তবে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করার স্বযোগ আছে।

দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় সতর্কতা:

কোনো দলিল আইনগত ও যথাযথ পদ্ধতিতে সম্পাদনের পর রেজিষ্টি করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমেই জমির সব দলিল-দস্তাবেজ ও
মালিকানা যাচাই করতে হবে। দলিলটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে খসড়াটি ভালো করে যাচাই করতে হবে। দলিলে কোনো ভুল থাকলে ও রেজিস্ট্রি হলে এটি সংশোধনের
ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় । অনেক ক্ষেত্রেই করের মাত্রা কমানোর জন্য জমির দাম কম দেখানো হয়।

এতে ভবিষ্যতে কিছু প্রতিকার পেতে ঝামেলা হয়।
দলিল রেজিস্টি হওয়ার পরপরই নকল তুলতে হবে এবং এটি তুলে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে ভুলভ্রান্তি আছে কি না। দলিল রেজিস্টি করার সময় একটি
রসিদ দেওয়া হয়। এই রসিদ মুল দলিল ওঠানোর সময় দেখাতে হয়।

Screenshot 2023 03 17 At 12.48.55 Am
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 16

কোনো সম্পত্তির আংশিক এক জায়গায় এবং বাকি অংশ অন্য জায়গায় পড়লে বেশির ভাগ অংশ যে এলাকায় পড়বে, সেখানের সাব-রেজিষ্টি অফিসে রেজিস্টি করতে হবে। কোনো বিশেষ কারণে দলিলদাতা বা গ্রহীতা অসুস্থ হলে সাব-রেজিস্ট্রারকে বাসায় নিয়েও রেজিষ্টি করা যায় ।

মনে রাখতে হবে, দলিল কার্যকর হয় দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকেই, অর্থাৎ যে তারিখে দলিলটি সম্পন্ন করা হয়েছে, সেই তারিখ থেকে,দলিল রেজিস্টির তারিখ থেকে নয় । বাংলাদেশের বাইরে দলিল সম্পাদন করা হলে দলিলটি যেদিন বাংলাদেশে পৌঁছাবে, সেই তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিষ্টি করাতে হবে।

দলিল রেজিস্ট্রি ফি:

১. বায়নাপত্র: সম্পত্তির মুল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি ৫০০ টাকা । পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে ফি এক হাজার টাকা । মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা ।

২. বন্ধক দলিল: বন্ধকি অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি বন্ধকি অর্থের ১ শতাংশ এবং ২০০ টাকার নিচে ও ৫০০ টাকার বেশি নয়। অর্থের
পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কিন্তু ২০ লাখ টাকার নিচে হলে বন্ধকি অর্থের শুন্য দশমিক ২৫ শতাংশ । তবে তা এক হাজার ৫০০ টাকার কম নয় এবং দুই হাজার টাকার বেশি নয়।

বন্ধকি অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ টাকার ওপরে হলে রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে বন্ধকি অর্থের শৃন্য দশমিক ১০ শতাংশ । তবে তা তিন হাজার টাকার কম নয় এবং পাঁচ হাজার টাকার বেশি হবে না।

৩. হেবা ও দানপত্র: মুসলিম ধর্মের ক্ষেত্রে হেবানামা এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে নাতনি ও সহোদর ভাইবোনের মধ্যে হয়, তাহলে রেজিস্ট্রি ফি ১০০ টাকা ।

৪. বন্টননামা দলিল: সম্পত্তির মুল্য তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ৫০০ টাকা, তিন লাখ টাকার বেশি এবং ১০ লাখ টাকার কম হলে ৭০০ টাকা । সম্পত্তির মুল্য
১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৩০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ২০০ টাকা । সম্পত্তির মুল্য ৩০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং সম্পত্তির মুল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা ফি দিতে হবে।

  • দলিল বলতে যা বুঝায়:

দলিল বলতে যে কোন চুক্তির লিখিত ও আইনথ্ৰাহ্য রূপ বোঝায় । তবে বাংলা ভাষায় সম্পত্তি, বিশেষ করে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়, বন্টন এবং হস্তান্তরের জন্য
“দলিল* শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

দলিলের পাঁচটি মৌলিক তথ্য হলো:

(ক) সম্পত্তির বর্ণনা,

(খ) দাতার পরিচয়,

(গ) গ্রহিতার পরিচয়,

(ঘ) সাক্ষীদের পরিচয় এবং দলিল সম্পাদনের তারিখ ।

দলিল সম্পাদনের পর সরকারের মনোনীত কর্মকর্তা কর্তৃক নিবন্ধনের বিধান রয়েছে। এতে দলিলের আইনী বৈধতা দৃঢ়তর হয়। দলিল সম্পাদনের জন্য
সরকারকে রাজস্ব দিতে হয়।

জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় এবং হস্তান্তরের জন্য দলিল শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হলেও যে কোনও চুক্তির ক্ষেত্রে দলিল শব্দটি প্রয়োগ করা যায়। বিয়ের কাবিননামা,
ইত্যাদিও দলিল পর্যায়ভুক্ত।

বিক্রয়ের সহজ্ঞাঃ

বিক্রয় হইল পরিশোধিত মুল্যের বা পরিশোধ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বা আংশিক পরিশোধিত এবং আংশিক পরিশোধ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মূল্যের বিনিময়ে মালিকানা
হস্তান্তর (সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৪ ধারা অনুসারে)।

  • বায়নাপত্র দলিল বা বিক্রয়ুক্তি দলিলঃ

কোন সম্পত্তি স্থিরকৃত শর্তে এবং সাব্যস্তকৃত মূল্যের আংশিক প্রাপ্তির পর উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বিষয়ে পক্ষগণের মধ্যে যে দলিল সম্পাদিত হয়, তাকে বায়নাপত্র
দলিল বলে । রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ১৭ক (২) ধারা অনুসারে, বায়নাপত্র দলিল সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য দাখিল করতে হয়।

  • ভায়া দলিল:

জমি সংক্রান্ত বিষয়াদির সাথে আমরা প্রায়শ “ভায়া দলিল” শব্দ যুগলের কথা শুনে থাকি। কিন্ত অনেকই জানিনা “ভায়া দলিল” কি এবং কাকে বলে?

সহজে উত্তর হচ্ছে, জমির মুল বা আদি দলিলকে ভায়া দলিল বলে । আর জমির মালিকানা নিরূপণের জন্য ভায়া দলিল একটি অপরিহার্য উপাদান ।

মনে করুন, আপনি একখণ্ড জমি আলম সাহেব থেকে ক্রয় করলেন, যার দলিল নং ২০০। আলম সাহেব উক্ত জমি ক্রয় করলেন সুফিয়া খাতুন থেকে, যার দলিল নং ১৩০। এখানে আপনার সুজিত দলিল নং ২০০ এর ভায়া দলিল নং হচ্ছে ১৩০। অর্থাৎ ভায়া দলিল হচ্ছে মুল দলিল যা থেকে সৃষ্টি হয় পরের দলিল সমূহ।

আপনি যখন কোন জমি ক্রয় করবেন তখন অবশ্যই জমির বিক্রেতা থেকে ভায়া দলিল চেয়ে নিবেন। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্টি অফিসে একটি নির্দিষ্ট ফরমে সার্চ করে
উক্ত দলিলের সঠিকতৃ যাচাই করে নিবেন । আর উক্ত ভায়া দলিল থেকে সৃষ্ট পরবর্তী প্রতিটি দলিলের দাগ নাম্বার ও জমির হিস্যা ঠিক আছে কিনা জেনে নিবেন। যদি সন্দেহ হয় তাহলে রেজিষ্টি অফিসে সংরক্ষিত দলিলের সাথেও মিলিয়ে দেখতে পারেন।

  • হেবার ঘোষণাপত্র দলিলঃ

যে দলিলের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক স্বামী ও স্ত্রী মধ্যে, পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে, দাদা-দাদি ও নাতি-নাতনির মধ্যে, নানা-নানী ও নাতি-
নাতনির মধ্যে, সহোদর ভাইগণের মধ্যে, সহোদর বোনগনের মধ্যে এবং সহোদর ভাই ও বোনগনের মধ্যে বিনিময়ে কোন কিছু গ্রহণ না করে পুবেব্র কোন সুনির্দিষ্ট
সময়ে নুন্যতম দুইজন স্বাক্ষির উপস্থিতিতে মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে হস্তান্তরিত সম্পত্তির স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, তাকে হেবার ঘোষণা দলিল বলে।

  • দানের ঘোষণাপত্র দলিলঃ

যে দলিলের মাধ্যমে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীগণের স্ব স্ব ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইন মোতাবেক স্বামী ও স্ত্রী মধ্যে, পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে, দাদা-
দাদি ও নাতি-নাতনির মধ্যে, নানা-নানী ও নাতি-নাতনির মধ্যে, সহোদর ভাইগণের মধ্যে, সহোদর বোনগনের মধ্যে এবং সহোদর ভাই ও বোনগনের মধ্যে বিনিময়ে
কোন কিছু গ্রহণ না করে পৃবের কোন সুনির্দিষ্ট সময়ে নুন্যতম দুইজন স্থাক্ষির উপস্থিতিতে মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে হস্তান্তরিত সম্পত্তির স্বীকৃতি প্রদান করা হয়,
তাকে “দান বিষয়ক ঘোষণা দলিল” বলে।

  • ভ্রম সংশোধন দলিলঃ

যে দলিলের মাধ্যমে মুল দলিলের বস্তুগত বিষয়সমুহ অপরিবর্তিত রেখে পূর্ববর্তী দলিলের করণিক ভুল সংশোধন করা হয়, তাকে ভ্রম সংশোধন দলিল বলে । এ দলিল মুল দলিলের পরিপুরক হিসেবে কাজ করে।

  • এওয়াজ বা বিনিময় দলিলঃ

যে দলিলের মাধ্যমে এক পক্ষের কোন জিনিসের মালিকানার পরিবর্তে অপর পক্ষের কোন জিনিসের মালিকানা হস্তান্তর হয়, তাকে এওয়াজ বা বিনিময় দলিল
বলে।

  • হেবা-বিল-এওয়াজ দলিলঃ

যে দলিলের মাধ্যমে প্রতীকী কোন বস্তু যেমন- ধর্মীয় গ্রন্থ, জায়নামাজ, তসবিহ ইত্যাদির বিনিময়ে কোন সম্পত্তি দান করা হয়, তাকে হেবা-বিল-এওয়াজ দলিল বলে। হেবাবিল এওয়াজ এর ক্ষেত্রে হক শুফা বা অগ্রক্রয়ের অধিকারের উদ্ভব হয় না।

  • বন্ধক দলিলঃ

যে দলিলের মাধ্যমে খণ হিসেবে অধিম প্রদত্ত বা ভবিষ্যতে প্রদেয় অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ দেনা পরিশোধের নিশ্চয়তা অথবা আর্থিক
দায় সৃষ্টি করিতে পারে এইরূপ কোন কার্য সম্পাদনের অঙ্গীকার হিসেবে নিদিষ্ট স্বাবর সম্পত্তির স্বার্থ হস্তান্তর করা হয়, তাকে বন্ধক দলিল বলে।

যে দলিলের মাধ্যমে গৃহীত খণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তির বন্ধক-গ্রহীতা বন্ধকী সম্পত্তি বন্ধক-দাতার বরাবরে হস্তান্তর করেন, তাকে বন্ধকমুক্তি দলিল বলে।
বন্ধকদাতা কর্তৃক গৃহীত খণের সমুদয় অর্থ পরিশোধের পর বন্ধক গ্রহীতা এ ধরনের দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টি করে দেন।

  • বন্টননামা দলিলঃ

যে দলিলের মাধ্যমে কোন সম্পত্তির অংশীদারগণ বা সহমালিকগণ নিজেদের মধ্যে উক্ত সম্পত্তি পৃথকভাবে ভাগ বা বন্টন করে নেয়, তাকে বন্টননামা দলিল বলে।

পাওয়ার অব আ্যাটর্নিঃ

পাওয়ার অব ত্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ২ (১) ধারা অনুসারে, “পাওয়ার অব ত্যাটর্নি” অর্থ এমন কোন দলিল যাহার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তাহার পক্ষে উক্ত দলিলে
বর্ণিত কার্য-সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন;

  • অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব আ্যাটর্নি (Revocable Power of Attorney)

পাওয়ার অব ত্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ২ (৪) ধারা অনুসারে, “অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব ত্যাটর্নি” অর্থ স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের বা খণ গ্রহণের বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক প্রদানের জন্য প্রদত্ত কোন পাওয়ার অব ত্যাটর্নি অথবা স্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে পণ মুল্য গ্রহণের
বিনিময়ে ভূমি উন্নয়নসহ উক্ত দলিল সম্পাদনের ক্ষমতা প্রদান সম্পর্কিত কোন পাওয়ার অব ত্যাটর্নি।

  • সাধারণ পাওয়ার অব ত্যাটর্নিঃ (Ordinary Power of Attorney)

পাওয়ার অব ত্যাটর্নি আইন, ২০১২ এর ২ (৭) ধারা অনুসারে, “সাধারণ পাওয়ার অব ত্যাটর্নি” অর্থ এই আইনের ২ (৪) ধারায় উল্লিখিত বিষয়ে সম্পাদিত
অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব ত্যাটর্নি ব্যতিত অন্য কোন বিষয়ে সম্পাদিত পাওয়ার অব ত্যাটর্বি।

বিশেষ পাওয়ার অব ত্যাটর্নিঃ (Special Power of Attorney)

কোন একক লেনদেন সংক্রান্ত এক বা একাধিক দলিল রেজিষ্টি করার একমাত্র উদ্দেশ্যে অথবা একটি বা একাধিক অনুরূপ দলিলের সম্পাদন স্বীকার করার ক্ষমতা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত দলিলকে বিশেষ পাওয়ার অব ত্যাটর্ণি দলিল বলে ।

  • বহালকরণ পত্র (Deed of Confirmation ):

পুর্বে রেজিস্ট্রিকৃত কোন দলিলের স্থতে বা মালিকানায় ত্লুটি থাকলে, পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ যে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্টির মাধ্যমে পূর্বের দলিলকে স্বীকৃতি প্রদান করে, তাকে বহালকরণপত্র বলে।

উদাহরণঃ- কোন নাবালকের সম্পত্তি এ নাবালকের কল্যানের জন্য তার কোন মাধ্যমে তার অভিভাবকের সম্পাদিত পূর্বের দলিলটি বহাল করতে পারে।

  • সাফকবালা দলিল: (Saf Kabla Deed)

কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফাকবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবালা বলা হয়।
এই কবালা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ
খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন।

এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো । দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃম্বতবান হলেন।

  • দানপত্র দলিল:

যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে । স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।

হেবা দলিল:

মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা সর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য ৷ এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।

হেবা বিল এওয়াজ:

মুসলিম আইন অনুসারে কোন কিছু বিনিময় নিয়ে দান করাকে বলে এওয়াজ বা হেবাবিল-এওয়াজ। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ১১৮ ধারা অনুসারে দু’জন ব্যক্তি যে ক্ষেত্রে পরস্পর নিজেদের মালিকানাধীন কোন জিনিসের মালিকানা হস্তান্তর করে সেক্ষেত্রে কোন একটি জিনিস টাকা না হলে সে আদান-প্রদানকে বলে এওয়াজ বা বিনিময় । এতে বিক্রয় চুক্তির উপাদান বিদ্যমান থাকায় এটি মূলত এক ধরনের বিক্রয়। এওয়াজ দলিলে বর্ণিত সম্পত্তির একজন দাতা তার নিজের সম্পত্তি।

অপরজনকে দেওয়ার পর তার প্রাপ্য সম্পত্তি তিনি না পেলে তিনি তার প্রদত্ত সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার অধিকারী হবেন । হেবা বিল এওয়াজ অগ্রক্রয়যোগ্য নয়।

হেবা বিল এওয়াজ দানপত্র দলিল

হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল । এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে কিন্তু এটা কোনো কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে। যেমন-পবিত্র
কোরআন, জায়নামাজ, তসবিহ, মোহরানার টাকা, এমনকি যেকোনো জিনিসের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ
শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহীতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সব রকম ক্ষমতার অধিকারী হবেন এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহীতাতে অর্পিত হবে ।

দাতার স্বার্থে কোনো প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টি হতে হবে। হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকার বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশি সুত্রে আগেপরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে, তাহলে শরিক কর্তৃক জানার তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে প্রিয়েমশন মামলা করতে পারে ।

হেবা বিল এওয়াজ এর উপাদানসমূহঃ

(১) গ্রহীতাকে হেবা গ্রহণের বিনিময়ে দাতাকে অবশ্যই কিছু দিতে হবে ।
€২) দানের মাধ্যমে নিজেকে সম্পুণরুপে নিঃস্বত্ে পরিণত করতে হবে।
(৩) হেবা-বির এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল দান আবশ্যক নয়।
(৪) হেবা-বিল-এওয়াজ প্রত্যাহারযোগ্য নয়।

  • এওয়াজ দলিল:

যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন
অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন করতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট ।

উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন দলিল বলে । এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।

  • বন্টনমানা দলিল:

শরিকগণ মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে । একই সম্পত্তিতে মালিক একই
বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দ্রই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সৃত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সুত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ।

বণ্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে । কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হবেনা । যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে
পারে । যদি শরিকগণ আপোষ মতে বণ্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।

  • অছিয়তনামা দলিল:

কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মদ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয়
ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই
ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলেই হবেন।

  • উইল দলিল:
    উইল এর বিস্তারিত-

উইল অর্থ ইচ্ছা। মুসলিম আইনে উইল হলো একটি আইনগত ঘোষণা । এই আইনগত ঘোষণার মাধ্যমে ঘোষণাকারী তার সম্পত্তি সম্পর্কিত কোনো ইচ্ছা বা
বাসনা তার মৃত্যুর পর পুরণ হোক এটা প্রকাশ করে।

  • উইলের সংজ্ঞাঃ

উইল সমাজের একটি অতি পরিচিত নাম । তবে এর আইনগত সংজ্ঞা দিয়েছেন বিখ্যাত আইনবিদগণ । উইলের সংজ্ঞায় প্রখ্যাত আইনবিদ জারমান বলেন, “উইল হলো এমন একটি দলিল, যা দ্বারা কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তির এমন বিলিব্যবস্থা করতে পারে, যা উইলকারীর মৃত্যুর পর কার্যকরযোগ্য ।”

আইনের ভাষায় উইল হচ্ছে, কোনো সুনির্দিষ্ট জিনিসের বা মুনাফার বা কোনো সুবিধাদির মধ্যে আনুতোষিক বা উপহার প্রদানের পদ্ধতিতে উইলকারীর মৃত্যু পর্যন্ত
তা স্থগিত রাখার অধিকার দান করা।

একজন উইলকারীর উইল মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে কার্যকর হয়। যে উইল করে তাকে উইলকারী এবং যার নামে উইল করা হয় তাকে উইল-গ্রহীতা বলা হয়। উইলের মুল
উৎস কোরআন ।

১৯২৫ সালের উত্তরাধিকারী আইনের ২(এইচ) ধারায় বলা হয়েছে, “কোনো হিন্দু জীবদ্দশায় তোহার মৃত্যুর পর) যাবতীয় সম্পত্তি কিভাবে বিলিব্যবস্থা হইবে তাহা যদি কোনো লিখিত দলিল দ্বারা নিরূপণ করিয়া যায়, তবে তাহাকে উইল বলে।

উইল করার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি:

মুসলিম আইনে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উইল একটি গুরুত্বপুর্ণ স্থান দখল করে আছে। উইল কোরআন-হাদিস সংক্রান্ত আইনবিশেষ । নাবালক নয়, এমন প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমানই উইল বা অছিয়তের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে। কোনো নাবালকের ক্ষেত্রে যেখানে ওই নাবালক ও তার সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য একজন অভিভাবক নিযুক্ত করা হয়েছে অথবা ওই নাবালকের ২১ বছর পুর্ণ হলেই সে পুর্ণবয়স্ক হয়েছে বলে ধরা হবে।

মুসলমানদের ক্ষেত্রে নাবালকত্ের বয়সসীমাটি উইল, দানপত্র, ওয়াকফ ইত্যাদি বিষয়ে ১৮ বছর পুর্ণ হলেই চলে । উইলের মুল বিষয়, হস্তান্তরটির ব্যাপারে দাতার
পুর্ণ উপলব্ধি বা বোঝার ক্ষমতা ।

তবে,

১. উইল করার সময় উইলকারীর মন সুস্থ থাকা আবশ্যক। বিকৃত মস্তিষ্ষের উইল অসিদ্ধ হবে।

২. যেকোনো চুক্তিপত্র করতে মুক্ত সম্মতি প্রয়োজন হয়, উইলেও তা দরকার। শক্তিপ্রয়োগে বাধ্য করে উইল করে নিলে তা গ্রাহ্য হবে না।

৩. উত্তরাধিকারিতৃ আইনানুসারে একজন সুস্থ মস্তিক্ষের সাবালক ব্যক্তি তার যাবতীয় পৃথক অথবা নিজ উপার্জিত সম্পত্তি অন্যের বরাবর উইল করে দিতে পারে, তবে দানের মতো উইলকারী যে ব্যক্তিদের ভরণপোষণ দিতে আইনগত বাধ্য ছিল তাদের জন্য ভরণপোষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে বাকি সম্পত্তি উইল করতে পারবে ।

যেমন:

১. একজন বিবাহিত রমণী তার উপার্জিত সম্পত্তি উইল করতে পারে ।

২. অন্ধ, বোবা ও বধির ব্যক্তি উইলের মর্ম অবগত হতে পারলেও উইল করতে পারবে না।

৩. সাময়িকভাবে অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তি যখন সুস্থমনা থাকে তখন উইল করতে পারে।

৪. উইলের মর্ম চিররুশ্ন বা অসুস্থতার কারণে অবগত হতে অপারগ হলে কেউ উইল করতে পারবে না। উত্তরাধিকারিত আইনের বিধান অনুসারে উইল প্রতারণা, বলপ্রয়োগের দ্বারা করা হলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে । উইলকারী যেকোনো উইল রদ ও পরিবর্তন করতে পারে এবং সর্বশেষ উইল কার্যকর বলে গণ্য হবে।

উত্তরাধিকারিত আইনান্রসারে উইলটি অবশ্যই লিখিত দলিল দ্বারা হতে হবে এবং উইলকারী কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর সম্মুখে দলিলের সব বিষয় অবগত হয়ে তাতে
স্বাক্ষর করবেন। দুইজন বা এর অধিক প্রত্যয়নকারী হিসেবে উইলে স্বাক্ষর করবেন।

  • ভিন্ন ধর্মের অনুকূলে উইল:

মুসলিম ধর্মের বাইরে উইলকারী ও উইল-গ্হীতা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হতে পারে, তা উইল নাচক করবে না । সুতরাং একজন মুসলমান এক অমুসলিমের পদে উইলে
সম্পত্তি দান করতে পারে যদি ওই অমুসলিম বিদেশি না হয়। আবার একজন অমুসলিম উইল দ্বারা সম্পত্তি প্রদান করতে পারে । তবে শত্রপক্ষীয় কোনো দেশের
অমুসলিমর উদ্দেশে উইল বাতিল হবে যখন ওই দেশ বিপক্ষে যুদ্ধরত থাকে।

  • সম্পত্তির কত অংশ উইল করা যায়:

কোনো মুসলমান তার দাফন-কাফন ব্যয় ও দেনা পরিশোধের পর, উদ্বৃত্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক উইলয়ূলে হস্তান্তর করতে পারে না। উইলকারীর মন
তুর পর উত্তরাধিকারীরা সম্মতি না দিলে উইলের মাধ্যমে বৈধ এক-তৃতীয়াংশের অধিক পরিমাণ সম্পত্তি দান কার্যকর হবে না।

  • পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়নি এমন ব্যক্তির ব্যাপারে উইল:

নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত এখনো ভূমিষ্ঠ হয়নি এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।

ক) যে ক্ষেত্রে যার বরাবরে উইল করা হয়, সে একটি খণ মাত্র এবং উইল করার ছয় মাসের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, অথবা

খ) যে ক্ষেত্রে উইলগ্রহণকারীরা কোনো বিশেষ ব্যক্তির অনির্ধারিত ছেলেমেয়ে এবং তার উইলকৃত সম্পদ মৃত্যুর সময় বিদ্যমান থাকে।

  • উইল মৌখিক বা লিখিত:

উইল বা অছিয়ত মৌখিক অথবা লিখিতভাবে কার্যকর করা চলে । “মুসলিম আইনে কোনো উইল বা অছিয়তকে বৈধ করার জন্য লিখিতভাবে তা প্রস্তুত করার
প্রয়োজনীয়তা নেই এবং যতক্ষণ পর্যন্ত উইল প্রদানকারীর উইল করার ইচ্ছে স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিশেষ আকৃতি এমনকি কোনো
মৌখিক ঘোষণারও প্রয়োজন নেই ।”

Screenshot 2023 03 17 At 12.48.14 Am
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 17
  • উইল অসিদ্ধ হওয়া:

তখন উক্ত উইল অসিদ্ধ হয়ে যাবে এবং উইলকৃত সম্পত্তি পুনরায় উইলকারীর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হবে । বিধানটি উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫-এর ১০৫ ধারার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে । যদিও ওই ধারা মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা।

শিয়া আইনে এ ক্ষেত্রে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তিথহীতার ওয়ারিশরা উইলকৃত সম্পত্তি পাবে, যদি না উইলকারী উইল নাকচ করে দেয়। কিন্তু উইলের সম্পত্তিহীতার কোনো ওয়ারিশ না থাকলে উইলকৃত সম্পত্তি উইলকারীর ওয়ারিশরা প্রাপ্য হবে।

উইলে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে দান: দানের উদ্দেশ্য অনুসারে উইলে ধর্মীয় দান মোট তিন প্রকার হতে পারে । যেমন:

(১) ফরজ কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে দান, অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে দান। যথা : হজ, জাকাত ও প্রায়শ্চিত্ত (কোনো মুসলমান
নামাজ-রোজা করতে না পারার প্রায়শ্চিত্ত বা কাফফারাম্বূপ গরিবকে দান করা)।

২) ওয়াজের কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে দান। যেমনথসাদকা, ফিতরা দুল ফিতরের দিনে গরিবকে প্রদত্ত) এবং ঈদ্বল আজহার কোরবানি ।

(৩) নফল কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে দান, অর্থাৎ সম্পুর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে দান। যেমন গরিবকে দান করা বা মসজিদ নির্মাণ করা বা সেতু নির্মাণ করা অথবা
পথিকদের সুবিধার্থে সরাইখানা স্থাপন করা । উইলে এ তিন শ্রেণীর দানের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর দান দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী অপেক্ষা এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর দান তৃতীয়
দান অপেক্ষা উত্তম ও অগ্রাধিকার পাবে ।

উইলের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা: মুসলিম আইন অনুযায়ী উইল করার ব্যাপারে তার ব্যতিক্রম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো :

১. মুসলিম আইন মোতাবেক একজন মুসলমান উইলকারী যেকোনো অনাত্রীয়কে তার সব সম্পত্তির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ উইলপত্রের মাধ্যমে দান করতে পারে, কিন্তু এর অধিক উইল করতে পারে না।

২. উইলকারী তার কোনো উত্তরাধিকারীর নামে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি দান করতে পারে না। এরূপ দান আইনগত অগ্রাহ্য হবে।

৩. উইলকারী তার কোনো উত্তরাধিকারীর নামে উইলপত্রের মাধ্যমে কোনো সম্পত্তি দান করলে মুলত আইন সংগত হবে না বটে; কিন্ত উইলকারীর মৃত্যুর পর তার অন্যান্য উত্তরাধিকারী তা মেনে নিলে সংশ্লিষ্ট উইলটি আইনসিদ্ধ ও কার্যকরী হবে।

৪. মুসলিম আইনের বিধানমতে একজন মুসলমান তার অন্যান্য উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে কেবল একজন উত্তরাধিকারীর বরাবরে উইল করতে পারে না।

৫. একজন উইলকারী শিয়া আইন মতে তার অন্যান্য উত্তরাধিকারীর অনুমতি বা সম্মতি ছাড়াই তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ তার যেকোনো উত্তরাধিকারীকে উইল হিসেবে দান করতে পারে৷ কিন্ত এক-তৃতীয়াংশের বেশি দান কার্যকরী করতে হলে উইলকারীর অন্যান্য উত্তরাধিকারীর অনুমতি বা সম্মতির প্রয়োজন হয়।

৬. উইলকারী তার মৃত্যুর সময় যদি কোনো অস্তিতৃহীন ব্যক্তির নামে উইল করে, তবে উক্ত উইল অবৈধ বলে গণ্য হবে । তবে উইল করার দিন হতে ছয় মাসের মধ্যে কোনো সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে মাতৃগভের সন্তানকে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি দান করে দিতে পারেন।

৭. উইলকারীর কোনো উত্তরাধিকারী না থাকলে তিনি তার সব সম্পত্তি যেকোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে উইলের মাধ্যমে দান করে দিতে
পারেন । মুসলিম আইনে বৈধ নয় এমন কোনো ক্ষেত্রে উইল করা যাবেনা।

৮. কোনো মুসলমান শর্তসাপেক্ষে উইল করতে পারে না । শর্তসাপেক্ষে উইলের মাধ্যমে দান অবৈধ বলে গণ্য হবে ।

৯. একজন উইলকারী ভবিষ্যতে পাবে এরূপ উইলপুর্বক দান করতে পারেন না এবং এরূপ দানও অবৈধ ।

১০. এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি উইলকারী কর্তৃক উইল করার পর বাকি দ্রই- তৃতীয়াংশ তার ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

১১. যেহেতু উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল কার্যকরী হয়, সেহেতু উইলকারী তার জীবদ্দশায় যেকোনো সময় উইল রদ করতে পারে।

  • উইল রদকরণ: উইল বা অছিয়তনামা রদ করা যায়। উইলকারী তার জীবদ্দশায় উইল রদ বা বাতিল করতে পারে । বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে উইলকারী তার উইলপত্র রদ করতে পারে।
  • পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ :

১. উইলকারী তার কৃত উইল লিখিত বা মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে রদ বা প্রত্যাহার করতে পারে।

২. যদি উইলকারী উইলকৃত সম্পত্তিতে এমন কোনো কাজ করে, যার ফলে উক্ত সম্পত্তির পরিবর্তন সাধিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট উইলটি
রদ হবে।

৩. উইলকৃত সম্পত্তিতে যদি উইলকারীর স্বত্ের অবসান ঘটে, তাহলে সংশ্লিষ্ট উইলটি স্বাভাবিকভাবেই রদ হয়ে যাবে ।

৪. উইল-গ্রহীতার উদ্দেশ্যে যে সম্পত্তি উইল করা হয়, তা যদি উইলকারী উইল করার পর অন্যের কাছে দান বা বিক্রি করে দেয়। তাহলে সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উইলটি রদ বা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে গণ্য হবে।

৫. উইলকারী আদালতের মাধ্যমেও তার কৃত উইল রদ বা প্রত্যাহার করতে পারবে ।

না-দাবী দলিল:

কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্তাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্তাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্থি করে দিতে পারেন । এরূপ
দলিলকে নাদাবী দলিল বলা হয়। বয়নামা দলিল: প্রজাদের ভূমি রাজস্ব বাকী পঙলে উপরস্থ মালিকগণ আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা উক্ত ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে উক্ত খাজনার ডিক্রিজারী দিয়ে উক্ত ভূমি নিলাম করাতেন।

উক্ত নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্ব সাধারণের খরিদ করবার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি অধিক টাকায় নিলামের ডাক উঠাতেন তিনি উক্ত নিলাম তাকে যেমন সরকার কর্তৃক বাকী ভূমি রাজস্বের নিমিত্ত মানী মোকদ্দমার দাবীর ওদেওয়ানী মোকদ্দমার খরচের টাকার নিমিত্ত ও রেহানী খণের দরুন । যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শন পত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।

দখলনামা দলিল:

বন্টনের মোকদ্দমা, স্ব সাব্যস্ত পুর্বক খাস দখল, উৎপাত ও প্রিয়েমশান ইত্যাদি মোকদ্দমায় ডিক্রির পর আদালত হতে বন্টনের মোকদ্দমায় কমিশনার ও অন্যান্য
মোকদ্দমায় আদালতের পদাতিক বা নায়েব, নাজির যোগে ডিক্রির মর্মমতে দখলী পরওয়ানের ভিত্তিতে দখল গ্রহণ করিতে হয় এবং দখল দেওয়ার পর কমিশনার ও
আদালতের পদাতিক বা নায়েব নাজির রিপোর্টসহ উক্ত দখলী পরওয়ানা আদালতে দাখিল করেন । তাকে দখলনামা দলিল বলা হয়।

রায় দলিল:

কোন সম্পত্তি টাকা পয়সা কিংবা অন্যান্য যে কোন কারণে আদালতে নালিশ হলে বাদীর আরজি, বিবাদীর জবাব দৃষ্টে সাক্ষী প্রমাণ গ্রহণ করে একতরফা বা
দোতরফা শুনানীর পর বিচারক বিচার করে উক্ত বিচার লিখিতভাবে জানিয়ে দেন তাকে রায় বলা হয়।

ডিক্রি দলিল:

রায়ের মর্মমতে রায়ের আদেশাংশ সংযোজন করে বাদী ও বিবাদী পক্ষের নাম ঠিকানাসহ সম্পত্তি সংক্রান্ত হলে সম্পত্তির তফসিল পরিচয়সহ একখানা দলিল
আদালত কর্তৃক জারী করা হয় তাকে ডিক্রি বলে।

আরজি দলিল:

বাদী বিরোধীয় ভূমির জন্য বিবাদীগণের বিরুদ্ধে আদালতে যে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন তাকে আরজি বলা হয়। এই আরজিতে বাদী তার স্বতৃ সম্বন্ধে যাবতীয় বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং প্রতিকার প্রার্থনা করেন। কোন কোন দরখাস্ত আরজি গণ্যে বিচার হয় যেমন প্রিয়েমশান অভিভাবক নিয়ুক্তির দরখাস্ত উত্তরাধিকার নিদর্শনপত্র, প্রবেট ইত্যাদি ।

আদালত যোগে সাফকবলা দলিল:

টাকা গ্রহণ করে বায়নাপত্র সম্পাদন করে দিয়ে যদি দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে না দেয় তাহলে যে ব্যক্তি বায়না দিয়েছেন তিনি আদালতযোগে নালিশ করে
আদালত কর্তৃক দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করিয়ে নিতে পারেন । আদালতের বিচারে দলিল সম্পাদনের মোকদদমা ডিক্রি হলে উক্ত ডিক্রি এ আদালতে জারী দিয়ে দলিলের মুসাবিদা ও ষ্ট্যাম্প আদালতে দাখিল করলে তম্মর্মে দলিললিপি করে আদালত দাতার পক্ষে দস্তখত করে দলিল রেজিষ্টারী করে দিবেন।

বায়নাপত্র দলিল:

কোন সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয় তাকে বায়নাপত্র বলে । বর্তমানে বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক । বায়না পত্রের মাদ্যমেও স্বত্ব হস্তান্তরিত হতে পারে । যদি কোন ব্যক্তি বায়নাপত্র মারফত জমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন এবং মুল্যের টাকা গ্রহণ করে থাকেন এবং বিশেষ কারণে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন নাই বা দিতে পারেন নাই ।

যেহেতু দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং গ্রহীতা দখল বুঝিয়ে নিয়ে ভোগ দখল করছেন সেহেতু সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩ ধারা মতে আধশিক বিক্রয় কার্যকরী হয়েছে। অতএব জমিতে খরিদ্দারের স্বত্ব হয়েছে বলে গণ্য হবে।

বেনামী দলিল:

অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া বিবেচিত হলে এ ব্যক্তি নিজ অর্থে ও স্বার্থে সম্পত্তি খরিদ করে তার দলিল নিজের নামে না করে তার যে কোন আত্মীয়ের বা বিশ্বাসী বন্ধু
বান্ধবের নামে বেনামী দলিল করতে পারেন বা নিজের সম্পত্তি খণের দায়ে বা অন্য কোন কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এ ব্যক্তি তার নিজের সম্পত্তি কোন
আত্রীয় স্বজনেবা বন্ধু বান্ধবের নামে দলিল করে দিতে পারেন । সেই দলিল অবশ্যই সাফকবালা ক্ষেত্র বিশেষে দানপত্র দলিল হবে ।

উইল দলিলের রেজিস্ট্রি খরচসহ অন্যান্য তথ্যাবলী –

Screenshot 2023 03 16 At 6.46.01 Pm
হেবা দলিল কি এবং কিভাবে করবেন ২০২৩ এ 18

রেজিষ্টেশনফি : ২০০টাকা (সি-ফিস)।
স্ট্যাম্প শুল্ক . প্রযোজ্য নয়।

২। ই-ফি: ১০০ টাকা ।
৩। এন-ফি:
১) বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা ।
২) ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা ।

(নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক) এনএন ফিস:-


১. বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা ।
২. ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা।

১. সকল প্রকার ফি নগদে রেজিষ্টি অফিসে জমা করতে হবে।

২. সরকার নির্ধারিত হলফনামা ২০০ টাকা মুল্যমানের স্টাম্পে প্রিন্ট করে মূল দলিলের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

৩. মোট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যায় না।

বিঞ্ঃ এক-তৃতীয়াংশের অধিক সম্পতি উইলের মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায় না ।

হেবার/দানের ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রি খরচসহ অন্যান্য

১। রেজিস্ট্রেশনফি:. ১০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বি) নং অনুসারে ।

২।স্টাম্পশুন্কা : ২০০ টাকা (১৮৯৯ সালের স্টাম্প আইনের ১ নম্বর তফশিলের ৪ নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত বর্ণনা

অনুসারে)।

: কে) ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা ।

(খ) ইফি: ১০০ টাকা।

(গে) এনফি:

৩। অন্যান্য ফিসসম

১. বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা ।

২. ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।

€ঘ) এনএন ফি (নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক):

১. বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।

২. ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০(তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬

বিজ্দঃ

১। হেবার ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে মুসলিমরা আপন ভাই-বোন, পিতা/মাতা- ছেলে/মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা/দাদী-নাতী/নাতনী, নানা/নানী-নাতী/নাতনী এই
কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় (রেজিস্টেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বি) নং অনুসারে ।

হেবা সংক্রান্ত আইনি সেবা তাহমিদুর রিমুরা ল ফার্ম কত্রিক –

তাহমিদুর রিমুরা ল ফার্ম একটি সনামধন্য ‘ল’ চেম্বার যেখানে ব্যারিস্টারস , আইনজীবীর মাধ্যমে হেবা সহ অন্য সকল বিষয়ে আইনগত সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কোন প্রশ্ন বা আইনী সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ-

GLOBAL OFFICES:
DHAKA: House 410, ROAD 29, Mohakhali DOHS
DUBAI: Rolex Building, L-12 Sheikh Zayed Road
LONDON: 1156, St Giles Avenue, Dagenham

Email Addresses:
info@trfirm.com
info@tahmidur.com
info@tahmidurrahman.com

24/7 Contact Numbers, Even During Holidays:
+8801708000660
+8801847220062

+8801708080817

হেবা কাকে বলে?

কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে কোনো বিনিময় ব্যতিরেকে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তাকে হেবা বলে। হেবা সম্পন্ন করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-হেবার প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি এবং দখল হস্তান্তর।

স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হেবা করা যায়। একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি বা সম্পত্তির যেকোনো অংশ যে কাউকে হেবা করতে পারেন। সম্পত্তির আয় জীবনকালীন ভোগ করার অধিকার হেবা করা যায়।

দান কাকে বলে?

১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি স্বেচ্ছায় কোনো মূল্য বা বিনিময় ব্যতিরেকে অন্যকে দেওয়াকে দান বলে।

দানের জন্য গ্রহীতার সম্মতির প্রয়োজন। স্থাবর সম্পত্তি দান করতে হলে কমপক্ষে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে রেজিস্টার্ড দলিলের মাধ্যমে করতে হবে। অস্থাবর সম্পত্তি রেজিস্টার্ড দলিল বা দখল হস্তান্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়।

হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ

আরেক রকম হেবা আছে, যাকে হেবা বা শর্ত-উল- এওয়াজ বলা হয়। বিনিময় প্রদানের শর্তযুক্ত হেবাকে হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ বলে। হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ মূলত দান।

এটা সম্পাদন হওয়ার জন্য দখল হস্তান্তর আবশ্যক। বিনিময় প্রদানের আগে এটা বাতিলও করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন চলে না। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে সম্পত্তি দান করা মৃত্যুশয্যাকালীন দানের ক্ষেত্রে হেবার শর্ত অনুযায়ী প্রস্তাব, সম্মতি এবং সম্পত্তির দখল হস্তান্তর প্রয়োজন।

তবে মৃত্যুশয্যাকালীন দান উইলের নিয়ম অনুযায়ী দাফন-কাফনের খরচ ও ঋণ বাদে বাকি সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি করা যাবে না এবং কোনো উত্তরাধিকারীকে করা যাবে না। মৃত্যুর আগমূহুর্তে মানুষের মন খুবই দুর্বল থাকে, তাই এই দানে এমন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তবে দাতার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা এক-তৃতীয়াংশের বেশি বা উত্তরাধিকারী বরাবর

এরূপ দানে সম্মতি দিলে তা বৈধ হবে। যে অসুখে মৃত্যু হয়, তার জন্য শয্যা নেওয়াই মৃত্যুশয্যা। এখানে মৃত্যুভীতি গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হয়, এক বছর ধরে কোনো রোগে ভুগলে আর মৃত্যুভীতি থাকে না, কাজেই সে ক্ষেত্রে মারজ-উল-মউতের প্রশ্ন আসে না।

জন্মগ্রহণ করেনি এমন শিশুকে হেবা দান বা হেবার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে দানকৃত সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করতে হয়। যার জন্ম হয়নি, তাকে যেহেতু তাত্ক্ষণিক হস্তান্তর করা সম্ভব নয়, কাজেই জন্ম হয়নি এমন কাউকে হেবা করা যায় না।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে হেবা

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে একজন মুসলমান ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক অন্য একজন মুসলমানকে যে দান করেন, তা হচ্ছে হেবা; এই হেবা শুধু দুজন মুসলমানের মধ্যেই হতে পারে।

হেবাকৃত সম্পত্তির নামজারি

হেবার জন্য লিখিত কাগজের প্রয়োজন নেই। হেবাকৃত সম্পত্তি নামজারি করতে হলে দখল, স্থানীয় তদন্ত ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হেবা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নামজারি করতে পারেন।

দখল হস্তান্তরের উত্কৃষ্ট প্রমাণ নামজারি। দলিলে হস্তান্তরের বিষয়টি উল্লেখ করলেও তা দখল হস্তান্তরের প্রমাণ নয়।

জনৈক রফিকুল্লাহ তাঁর ছেলের স্ত্রী নূরজাহান বেগমকে ১৯১৬ সালে লিখিত দলিলের মাধ্যমে একটি সম্পত্তি হেবা করেন। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত জমিটি মিউটেশন হয়নি। মিউটেশন প্রসিডিং চলাকালে রফিকুল্লাহ মৃতু্যবরণ করেন।

হেবাকৃত সম্পত্তির নামজারিএ বিষয়ে কোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করে যে হেবা করা হয়েছে, গ্রহীতা সম্মতি দিয়েছে; তবে দখল হস্তান্তরের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। হেবা করার পর রফিকুল্লাহ জমিটির দখলে ছিল এবং গ্রহীতা দূরে থাকার কারণে বাস্তব দখল গ্রহণ সম্ভব ছিল না। কোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করে যে হেবাটি সম্পন্ন হয়নি বিধায় তা বাতিল।

লিখিত দলিল ও রেজিস্ট্রি দলিল ছাড়া হেবা করা যায় কি?

মুসলিম আইন অনুযায়ী হেবা করতে লিখিত দলিলের প্রয়োজন নেই, রেজিস্ট্রি করারও প্রয়োজন নেই। তবে লিখিত দলিল থাকলে বা রেজিস্ট্রি করলে তা প্রমাণে সহজ হয়। তবে দানের ক্ষেত্রে লিখিত দলিল এবং তা রেজিস্ট্রি করা প্রয়োজন।

হেবাকৃত সম্পত্তি ভাড়াটিয়ার দখলে থাকলে তার দখল কিভাবে হস্তান্তরিত হবে?

এ ক্ষেত্রে দাতা যদি ভাড়াটিয়াকে সম্পত্তির ভাড়া গ্রহীতা বরাবর প্রদানের অনুরোধ করে বা জমির মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র গ্রহীতাকে দিয়ে দেয়, অথবা গ্রহীতা বরাবর নামজারি করা হয়। তবে দখল হস্তান্তরিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

হেবাকারী ও গ্রহীতা যদি দানকৃত সম্পত্তিতে যৌথভাবে বসবাস করে, তবে দখল কিভাবে হস্তান্তরিত হবে?

এ ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক দখল হস্তান্তর সম্ভব নয় এবং প্রয়োজনও নেই। দাতা যদি এমন কোনো কাজ করেন, যা থেকে তাঁর দখল হস্তান্তরের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়, তাহলেই দখল হস্তান্তর হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। নামফলক পরিবর্তন, নামজারি, সম্পত্তির বিবরণীতে উল্লেখ করা, আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করা ইত্যাদিভাবে দাতা তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন।

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হেবা করার নিয়ম কী?

দাতা ও গ্রহীতা দানকৃত সম্পত্তিতে বসবাস করলে কিভাবে দখল হস্তান্তর বোঝানো হয়, তা আগের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দান করলে একই নিয়মে দখল হস্তান্তর বোঝাতে হবে। যদি সম্পত্তি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, দানের পর স্ত্রীর পক্ষে স্বামী ভাড়া আদায় করে থাকবেন। স্বামী যদি অস্থাবর সম্পত্তি অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রীকে রেজিস্টার্ড দলিল-মূলে দান করে যে স্ত্রী ভালো-মন্দ বুঝতে পারে-এরূপ দান বৈধ।

নাবালককে দান করলে কিভাবে হস্তান্তরিত হবে?

নাবালকের পক্ষে তার অভিভাবকের কাছে দখল হস্তান্তরিত হলে দান সম্পন্ন হবে। নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হচ্ছে তার বাবা। বাবার অবর্তমানে বাবা কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি, তাদের অবর্তমানে দাদা বা দাদা কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি।

বাবা বা অভিভাবক কর্তৃক নাবালককে দান করলে দখল কিভাবে হস্তান্তর করতে হয়?

এ ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরের প্রয়োজন নেই। দান করার ইচ্ছা এবং ঘোষণাই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট।

Other posts you might like

Call us!

× WhatsApp!
/* home and contact page javasccript *//* articles page javasccript */