ওয়ারিশ সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রয়
ওয়ারিশ সম্পত্তি বা পৈত্রিক সম্পত্তি ক্রয়ের আগে তিনটি ডকুমেন্ট দেখে নিবেন। তিনটি ডকুমেন্ট না থাকলে ক্রয় বায়নাপত্র লেনদেন করবেন না।
ওয়ারিশ সম্পত্তি কেনার আগে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসঃ
১) ওয়ারিশ সনদ পত্র।
২) পারিবারিক ভাগবন্টন রেজিষ্ট্রেশন দলিল
৩) নামজারি, খতিয়ান। তারপর অন্যান্য কিছু বিষয় দেখতে হবে।
যেমন: বিক্রেতা যে সূত্রে মালিক হলো, তার পূর্বের মালিক কোন সূত্রে মালিক তার দলিল খতিয়ান কপি যাচাই বাছাই করে নিবে।
এই তিনিটি ডকুমেন্ট যার কাছে না থাকবে তার দখলে থাকুক বা পারিবারিক মৌখিক বন্টন হউক আপনি ক্রয় করবেন না। অনেকেই মৃত পিতা মাতার নামের সম্পত্তি অন্যান্য ভাইবোন ওয়ারিশদের না জানিয়ে গোপনে বিক্রি করে দেয়,,,কেউ কেউ যতটুকু অংশ পাবে তার বেশি বিক্রি করে ফেলে,,, কেউ কেউ আছেন ভালো পজিশনের জমি বিক্রি করে দেন। কেউ কেউ আছেন ওয়ারিশদের অংশও বিক্রি করে ফেলেন। কেউ কেউ আছেন পারিবারিক মৌখিকভাবে ভাগের অংশ বিক্রি করেন।
মৌখিক ভাগ কোনো দলিল নয়। মৌলিক বন্টনের কোনো মূল্য নেই। মৌখিক কথার দাম নেই। এক লোক দীর্ঘ বছর ধরে পারিবারিক মৌখিক ভাগ করা জমি ভোগদখল করে আসছে,,, জমিটার মূল্য অন্যান্য জমির চেয়ে অনেক বেশি,,, বেশি দাম হওয়াতে তারই এক ভাই জমিটির অংশ দাবি করল,,, সবাই যতই বলে মৌখিক ভাগের কথা, ভাই তা মানতে রাজি নয়,,, ভাই বলছে মৌখিক ভাগ মানিনা, পুনরায় ভাগবন্টন করতে হবে।
তারা মৌখিক ভাগ না করে পারিবারিক বন্টন নামা রেজিষ্ট্রেশন দলিল করে নিলে ভাই কখোই দাবী করলে তা আইন সম্মত হতো না। তাই বন্টননামা রেজিষ্ট্রেশন দলিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ারিশ সনদ, বন্টননামা রেজিষ্ট্রেশন দলিল, যার আছে তার সম্পত্তিতে কখনোই কোনো ওয়ারিশ ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি করতে পারবেনা। ওয়ারিশ সনদ পত্রটি প্রমাণ করে যে প্রত্যেক ওয়ারিশ সম্পত্তির মালিক। বন্টননামা রেজিষ্ট্রেশন দলিল প্রমাণ করে যে প্রত্যেক ওয়ারিশের সম্মত্তিতে বন্টননামা রেজিষ্ট্রেশন দলিল করা হয়। আবার দেখতে হবে ওয়ারিশ সনদ সঠিক কি না, প্রত্যেক ওয়ারিশের নাম সঠিকভাবে উল্লেখ্য আছে কি না,,, বন্টননামা রেজিষ্ট্রেশন দলিলে প্রত্যেক ওয়ারিশের স্বাক্ষর নাম, ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ্য কি না।
অনেকেই বোনের অংশ না দিয়ে, বিক্রি করে দেন, যিনি ক্রয় করেন সেই লোক বিপদে পড়ে। কারণ ক্রেতা বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত ছিল বিক্রেতা কোন সূত্রে সম্পত্তির মালিক, সেসব ডোকোমেন্ট দেখা উচিত ছিল। পৈতৃক সম্পত্তি হলে বা ওয়ারিশ সম্পত্তি হল।
১। আদালতের বেশির ভাগ মামলা কোন না কোন ভাবে জমি-জমা থেকে উদ্ভব?
২। জমি ক্রয়ের পূর্বে আপনার সাবধানতা অবলম্বন ও জমি ক্রয়ের পর আপনার কিছু করনীয় আপনার কষ্টার্জিত আয়ে কেনা সম্পত্তি রক্ষা করতে ও আদালতে
জমি-জমা সংক্রান্ত মামলা-মোকদযার সংখ্যা কমাতে পারে।
জমি ক্রয়ের পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো যাচাই কারুনঃ
১। সম্পত্তিতে বিক্রেতার সঠিক মালিকানা আছে কিনা ও উক্ত সম্পত্তি বিক্রয়ের বৈধ অধিকার তার আছে কি-না তা যাচাই কারুন।
বিক্রেতার নিকট থেকে দলিল, খতিয়ান এবং পর্চা নিয়ে পর্যায়ক্রমে রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস ও সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে এখলোর সঠিকতা যাচাই করুন।
২। সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান দাতার নিজ নামে আছে কিনা কিংবা পূর্ব পুরুষের সম্পত্তি হলে, সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান পূর্ব পুরুষের নামে আছে কি-না তা যাচাই করুন।
কারন সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩সি ধারা মোতাবেক, কোন ব্যক্তি উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্যভাবে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে, এর অধীন তার নিজ নামে সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে, অথবা উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে, তার নিজ নামে বা পূর্ববর্তী নামে সর্বশেষ
খতিয়ান প্রস্তুত করা না থাকলে, কোন স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবে না, যদি অন্য কোন ভাবে বিক্রয় হয়, তবে তা অবৈধ হবে। বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি
পেয়ে থাকলে মৃত ব্যক্তির কতজন ওয়ারিশ আছেন, তা ওয়ারিশ সনদ নিয়ে ও বিক্রেতার প্রতিবেশিকে জিজ্ঞাসা করে যাচাই করুন । ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তির বেশি
বিক্রয় করছেন কিনা যাচাই করুন।
৩। হাল জন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ আছে কি-না যাচাই করুন । পূর্বেই ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করা থাকলে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা)
পরিশোধের দাখিলা বা রশিদটি জাল কিনা তা সং্রিষ্ট সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে যাচাই করুন|
৪ প্রস্তাবিত সম্পত্তির দখল বিক্রেতার আছে কি-না, যাচাই করুন । সম্পত্তিতে বিক্রেতার দখল না থাকলে সে জমি ক্রয় করা সঠিক হবে না।
৫। সম্পত্ভিটি খাস কিংবা সরকারি কিনা যাচাই করুন| সরকারী বা খাস সম্পত্তি বিধিবহির্ভূত ভাবে ক্রয়-বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
৬। অন্য কোন পক্ষের সাথে বিক্রয় চুক্তি বা বায়না পত্র রেজিস্তি করা আছে কিনা তা যাচাই করুন| সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর €৫৩বি ধারা অনুযায়ী, বায়নাপত্র
বলবত থাকাকালে, বায়নাপত্রের অধীন কোন স্থাবর সম্পত্তি, উক্ত বায়নাপত্র আইনানুগভাবে বাতিল না করে, বায়নাপত্র গ্রহীতা ব্যতীত অন্য কোন পক্ষের নিকট হস্তান্তর
করা যাবে না, অন্য কোন ভাবে হস্তান্তর করা হলে তা বাতিল হবে।
৭। ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়বদ্ধ কিনা তা যাচাই করুন। কারন সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩ুডি ধারা মোতাবেক, বন্ধক-গ্রহীতার লিখিত
সম্মতি ব্যতীত কোন নিবন্ধিত বন্ধকী স্থাবর সম্পত্তি পুনঃবন্ধক বা বিক্রয় করা যায় না, এতদসন্পেও কোন পুনঃবন্ধক বা বিক্রয় করা হলে তা বাতিল হবে।
৮। নাবালকের সম্পত্তি হলে বৈধ অভিভাবক অথবা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবকেন বিক্রয়ের ক্ষমতা আছে কি-না যাচাই করুন।
৯। জমি বিক্রয়ের জন্য আটর্নি নিয়োগ করা আছে কি-না তা যাচাই করুন। আ্যাটর্নি নিয়োগ করা থাকলে আ্যাটর্নি ছাড়া মূল মালিকের সম্পাদন গ্রহণযোগ্য নয় । অবশ্য বিধি
মোতাবেক পাওয়ার অব আ্যাটর্নি দলিল বাতিল করে মূল মালিকের সম্পাদনে দলিল রেজিস্ট্রি করা যাবে।
১০। দলিল লেখার জন্য একজন ভাল দলিল লেখকের সহযোগীতা নিন। রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিলের পূর্বে দলিলটি ভালভাবে পড়ে নিন। দলিলের
শুরুতৃপূর্ণ যায়গাগুলো বার বার পড়ে নিশ্চিত হোন যে, দলিলটি নির্দিষ্ট ফরমেটে আইন ও বিধি অনুযায়ী লেখা হয়েছে।
জমি ত্রয়ের পূর্বেই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন মনে রাখবেন, জমি ক্রয়ের পূর্বে আপনার অসাবধানতা বশত আপনি মামলা মোকদ্দমার সম্মুখীন হতে পারেন।
হারাতে পারেন আপনার কষ্টার্জিত আয়ে কেনা মূল্যবান জমি । তাই ক্রয়ের পূর্বে ভেবে দেখুন, আপনি মামলা কিনবেন, নাকি জমি কিনবেন । কারণ বিজ্ঞ আদালতের
বেশির ভাগ মামলা জমা-জমি সংক্রান্ত ।
জমি ক্রয়ের পর আপনার করনীয়ঃ
যে কোন দলিলের মাধ্যমে বা উত্তরাধিকার সুত্রে জমি প্রান্তির পর আপনার মালিকানা স্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নিমলিখিত কাজগুলো করতে হবেঃ
১) দলিল রেজিস্ট্ির পর আমিন দ্বারা জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে পূর্বেন মালিকের কাছ থেকে দখল বুঝে নিন।
২) জমিতে আপনার দখল প্রতিষ্ঠার জন্য জমির প্রকৃত বাবহার তথা চাষাবাদ, গাছপালা রোপন, ঘরবাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি করুন।
৩) রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মূল দলিল পেতে দেরি হলে মূল দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করুন।
৪) দলিলের নকল প্রাপ্তির পর দ্রুত সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করে নিজ নামে নামজারি/খারিজ (মিউটেশন) করুন, কারন দখল এবং নামজারি
করতে দেরি করলে অসাধু বিক্রেতা আপনার ক্রয়কৃত জমি অন্যত্র বিক্রয় করতে পারে।
৫) সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি হলে, নামজারি খতিয়ান এবং ডি,সি,আর, সংগ্রহ করুন এবং নতুন হোল্ডিং এ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করে
দাখিলার কপি সংগ্রহপূর্বক সংরক্ষণ করুন।
৬। নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করুন।
৭। সম্পত্তির মূল মালিক মারাগেলে মৃত ব্যক্তির জীবিত ওয়ারিশগণ জম্পত্তির নিজ নিজ অংশ পৃথকীকরনের জন্য নিজেদের মধ্যে ‘বন্টননামা’ দলিল প্রস্তুত করে রেজিস্ট্রি
অফিসে রেজিস্ট্রি এবং ভূমি অফিসে নামজারী করুন|