রপ্তানি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন – বাংলাদেশে রপ্তানি ব্যবসার পূর্ণাঙ্গ গাইড
(TRW Law Firm – রপ্তানি ব্যবসায় আইনি সহায়তার জন্য আপনার বিশ্বস্ত অংশীদার)
রপ্তানি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?

বাংলাদেশ একটি রপ্তানিমুখি দেশ হিসেবে দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। তৈরি পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে কৃষি পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক এবং আইটি সেবা – বাংলাদেশি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও নীতি রপ্তানি ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যেমন:
- আর্থিক প্রণোদনা: সরকার রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা প্রদান করে।
- বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: রপ্তানিমুখি শিল্প স্থাপনের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা।
- ট্যাক্স রেয়াত: রপ্তানি আয় নির্দিষ্ট পরিমাণে কর রেয়াতের অধীনে আসে।
- বাণিজ্যিক সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সহজ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (EPB) বিশেষ সহায়তা প্রদান করে।
রপ্তানিমুখি কোম্পানি গঠন: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা
১. কোম্পানি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসমূহ
রপ্তানি ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ট্রেড লাইসেন্স: আপনার ব্যবসার মূল লাইসেন্স।
- টিন সার্টিফিকেট: কর নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।
- ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট: ভ্যাটের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
- ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট (যদি লিমিটেড কোম্পানি হয়)।
- মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশন (লিমিটেড কোম্পানির জন্য প্রয়োজন)।
- ইআরসি (Export Registration Certificate): রপ্তানি নিবন্ধনের জন্য আবশ্যক।
- ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট: সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে।
২. অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা
একজন রপ্তানিকারককে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বায়ার (Buyer): আন্তর্জাতিক ক্রেতা।
- ব্যাংক: পেমেন্ট এবং এলসি প্রসেসিং।
- সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট: কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং শিপমেন্ট।
- ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার: পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত কার্যক্রম।
- ভ্যাট এবং কাস্টমস: কাস্টমস ডিউটি এবং অন্যান্য কর সংক্রান্ত বিষয়।
- ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি: শিপমেন্টের বীমা।
- EPB (Export Promotion Bureau): রপ্তানির জন্য সরকারের সহযোগিতা।
- চেম্বার অব কমার্স: আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন।
- এম্বাসি: বাণিজ্যিক চুক্তি ও সমঝোতা।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য নির্বাচন ও বাজার গবেষণা
১. পণ্য নির্বাচন
রপ্তানিযোগ্য পণ্য নির্বাচন করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়ে গুরুত্ব দিন:
- পণ্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা।
- উৎপাদন খরচ এবং প্রাপ্তি।
- পণ্যের মান এবং সনদপত্র।
- পরিবহন ও সংরক্ষণ সহজলভ্যতা।
২. মার্কেট রিসার্চ
মার্কেট রিসার্চের মাধ্যমে সম্ভাব্য বাজার নির্ধারণ করা জরুরি।
- বাজারের চাহিদা ও প্রবণতা বিশ্লেষণ।
- প্রতিযোগিতা ও মূল্য নির্ধারণ।
- বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা: যেমন শুল্ক, কাস্টমস বিধি ইত্যাদি।
আন্তর্জাতিক ক্রেতা খোঁজা এবং সম্পর্ক স্থাপন
- বাণিজ্য মেলা: বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে বায়ারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা।
- অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: আলিবাবা, ইবে, বা অ্যামাজনের মত প্ল্যাটফর্ম।
- চেম্বার অব কমার্স: স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমে যোগাযোগ।
- এম্বাসি ও ট্রেড কমিশন: সংশ্লিষ্ট দেশের বাণিজ্য মিশনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ।
পণ্য রপ্তানির ধাপসমূহ
১. ইনকোটার্ম ২০২০
ইনকোটার্মস হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিক্রেতা এবং ক্রেতার দায়িত্ব ও খরচ নির্ধারণের জন্য গৃহীত শর্ত।
- FOB (Free on Board)
- CIF (Cost, Insurance, and Freight)
- EXW (Ex-Works)
২. পেমেন্ট মেথড
রপ্তানি পণ্যের পেমেন্ট সংগ্রহের জন্য বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো হলো:
- এলসি (Letter of Credit)
- টি টি (Telegraphic Transfer)
- সি এ ডি (Cash Against Documents)
৩. শিপিং এবং কন্টেইনার ব্যবস্থাপনা
- FCL (Full Container Load) এবং LCL (Less than Container Load) শিপমেন্ট।
- বিভিন্ন ধরণের কন্টেইনার যেমন ২০ ফুট, ৪০ ফুট।
৪. ডকুমেন্টেশন
রপ্তানির জন্য যে ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত করতে হয় সেগুলো হলো:
- প্রোফর্মা ইনভয়েস
- কমার্শিয়াল ইনভয়েস
- প্যাকিং লিস্ট
- বিল অব এক্সপোর্ট
- বিল অব ল্যাডিং
- অরিজিন সার্টিফিকেট
কম পুঁজিতে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রপ্তানি
১. কুরিয়ার এজেন্টের ভূমিকা
- বিশ্বস্ততা যাচাই: কুরিয়ার কোম্পানির ট্র্যাক রেকর্ড পরীক্ষা।
- চুক্তি ও খরচ: পণ্য পরিবহনের জন্য সঠিক চুক্তি।
২. পণ্য ও বায়ার নির্বাচন
- কুরিয়ারের মাধ্যমে প্রেরণযোগ্য ছোট আকারের পণ্য।
- নতুন বাজার খুঁজে বের করা।
কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ
১. উৎপাদক ও বায়ারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন
- ডকুমেন্টেশন: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন চুক্তি ও কমিশন চুক্তি।
- উৎপাদক খুঁজে পাওয়া: স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উৎপাদকদের সাথে যোগাযোগ।
২. প্রাইস অফার ও কমিশন চুক্তি
- পণ্যের মূল্য এবং কমিশনের হার নির্ধারণ।
- সাপ্লায়ারের সাথে লিখিত চুক্তি।
TRW Law Firm এর সেবা
TRW Law Firm রপ্তানি ব্যবসার প্রতিটি ধাপে আইনি সহায়তা প্রদান করে। আমাদের সেবার মধ্যে রয়েছে:
- কোম্পানি নিবন্ধন ও ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতি।
- বাণিজ্য চুক্তি ও ইনকোটার্ম নির্ধারণ।
- কাস্টমস ও ভ্যাট সংক্রান্ত পরামর্শ।
- বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি।
রপ্তানি ব্যবসার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং সফলতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যান।