তালাক প্রদানের পদ্ধতি ( মুসলিম আইন অনুযায়ী )
Written by – Sourav Das, Junior Associate, TRW Law Firm
বাংলাদেশে তালাক সংক্রান্ত আবেদন, রেজিস্ট্রেশন,ফিস এবং পদ্ধতি এইসব বিষয়ে আলোচনা আছে কয়েকটিআইনে। সেগুলো আমি নিচে বিশদভাবে আলোচনা করবো। যেসব আইনে আমি আলোচনা আনবো তা হলোঃ
- The Muslim Family Law Ordinance, 1961;
- The Family Law Ordinance Act, 1985;
- The Divorce Act, 1860;
- The Dissolution of Muslim Marriage Act, 1939;
- The Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, 1974’
The Muslim Family Law Ordinance, 1961 অনুযায়ী তালাকের বিষয়ে যা আলোচনা রয়েছেঃ
এই অধ্যাদেশের ধারা ৭ অনুযায়ী, তালাকের বিধানবলী আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদিকোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাক ঘোষনার করে যেকোন পন্থা অবলম্বন করে। অতঃপর লিখিত ভাবে সেই তালাক নোটিশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের এর কাছে এক কপি এবং স্ত্রী এর কাছে এক কপি সেন্ড করতে হয়। যদি তালাক বাতিলকরা না হয় প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে, তাহলে নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হবে নাহ।
নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব
ধারা ৭ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশ পাওয়ার পর, ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান দুইপক্ষের মধ্যে সালিশি এবং পুনর্মিলন এর জন্য সালিশি কাউন্সিল গঠন করবেন। সালিশি কাউন্সিল গঠনের মাধ্যেমে সকল রকমের পদক্ষেপনেওয়ার মাধ্যেমে পুনর্মিলন এর সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
গর্ভাবস্থায় তালাক এর নিয়ম
যদি তালাক ঘোষনা দেওয়া অবস্থায় কোন স্ত্রী গর্ভাবস্থায় থাকে, যতদিন এর সময় থাকে অথবা ৯০ দিন যেটাআগে শেষ হয়।
তালাক দেওয়ার ছাড়া অন্য ভাবে তালাক এর পদ্ধতি
ধারা ৮ অনুযায়ী বলা হয়েছে যে, তালাক দেওয়ার অধিকার যখন স্ত্রী এর উপর অর্পণ করা হয়েছে বা, দুই পক্ষআলোচনা সাপেক্ষে তালাক দেওয়ার জন্য সম্মতি প্রদান করেছেন সেই ক্ষেত্রে ধারা ৭ প্রযোজ্য হবে।
The family Law Ordinance, 1985 অনুযায়ী তালাক দেওয়ার পদ্ধতি
১। এই অধ্যাদেশ এর অধীনে কোন ব্যক্তি যদি তালাক চায় তাহলে তাকে অবশ্যাই সহকারী জজ এর আরজি দাখিলের মাধ্যেমে তালাক গ্রহন করতে হবে তা করতে হবে ৩০ দিনের মধ্যে। আরজিতে ঠিকানা, কারন, ফিস, কাগজপত্র এইসব বিষয় উল্লেখ থাকবে এবং শুনানীর সময় কোন দস্তাবেজ যদি আদালতে পেশকরতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যাই আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
২। আরজি দাখিলের পর সুমন প্রেরনের মাধ্যেমে ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে হবে আদালতে সাথেপ্রাসঙ্গিক দস্তাবেশ এর মাধ্যেমে, এই সময়ের মধ্যে দাখিল করতে না পারলে আদালত ২১ দিনের বেশি নয়এমন সময় দিতে পারবে।
৩। যদি নির্ধারিত শুনানীর সময় কোন পক্ষ আদালতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয় তাহলে আদালত মোকাদ্দমা টিখারিজ করে দিতে পারে এবং সেই খারিজ এর বিপরীতে দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৯, বিধি ৯ অনুযায়ীআবেদন দায়ের করতে পারে। যদি বিবাদী উপস্থিত না হয় তাহলে, বিবাদীর বিরুদ্ধে এক তরফা আদেশজারি হবে এবং বিবাদী উপযুক্ত কারন দেখালে তাকে আরো ২১ দিনে সময় দিবে আদালত।
৪। আদালত এই পর্যায়ে এসে মধ্যস্থতার কথা বলতে পারে যা আইনের ১০(৩), এবং ১৩(২) অনুযায়ী বলাহয়েছে।
৫। যদি মধ্যস্থতা করতে ব্যর্থ হয় পক্ষ তাহলে আদালত শুনানী এবং পক্ষের বক্তব্য শুনে রায় বা আদেশ দিতেপারে।
তালাক এর জন্য ফিস
ধারা ২২ এ বলা হয়েছে যে, যখন পারিবারিক আদালতে মোকাদ্দমা দায়ে করা হবে আদালত ফিস দিতে হবে ২৫টাকা।
আপিল করার বিধান
পারিবারিক আদালতের এর রায়, আদেশ বা ডিক্রির বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা আদালতে আপিল দায়েরকরতে হবে। জেলা আদালতের আপিল চাইলে অতিরিক্ত জেলা আদালতের কাছে পাঠাতে পারে সিদ্ধান্ত, রায় বাআদেশ দেওয়ার
জন্য।
পারিবারিক আদালতে রায় হওয়ার পর কার্যক্রম
ধারা ২৩ অনুযায়ী বলা হয়েছে যে, আদালত এই অধ্যাদেশ এর বিধি মেনে রায় বা আদেশ দিয়ে সেখানেঅবশ্যাই, সে ডিক্রি সালিশি কাউন্সিল এর কাছে ৭ দিনের মধ্যে পাঠাবে রিসিপ্ট সহ এবং চেয়ারম্যান এমনভাবেপদক্ষেপ নিবে, যা তার কাছে তালাক হিসেবে এসেছে। চেয়ারম্যান ডিক্রি রিসিপ্ট পাওয়ার ৯০ দিনের পূর্ব পর্যন্ততালাক কার্যকারিতা হবে নাহ।
The Divorce Act, 1860 অনুযায়ী তালাক প্রদানের নিয়ম
এই আইনের ধারা ১০ অনুযায়ী, পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়পক্ষ পিটিশন দায়ের করার মাধ্যেমে তালাক চাইতে পারে। পুরুষ ব্যভিচারের এর ভিত্তিতে জেলা আদালত বা উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করতে পারে। স্ত্রী তালারপিটিশন দায়ের করার কিছু ভিত্তি প্রয়োজনীয়ঃ
- ব্যভিচার করে
- ব্যভিচার করার মাধ্যেমে অন্য মহিলার সাথে বিবাহ আবদ্ধ হয়;
- ধর্ষণ, যৌনতা পাশবিকতা;
যদি শুনানী করে আদালত মনে করে কোন যে, কোন রকম ব্যভিচারে এর প্রমান পাওয়া যায় নি, তাহলে আদালতপিটিশন টি খারিজ করে দিবে। খারিজ করলে সেই আদালতে রেভিউ এবং উচ্চ আদালতে রিভিশন দায়ের এরঅধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। প্রমান পেলে উচ্চ আদালতের বিভাগ এর অনুমতি ব্যাতিত কোন আদেশ বারায় বা ডিক্রি প্রদান করিবেন না।
যদি খারিজ উচ্চ আদালত বিভাগ করে, তাহলে এর বিপরীতে কোন নতুন পিটিশন দায়ের করা যাবে নাহ। উচ্চআদালত কোন নিসি ডিক্রি দিলে তা ৬ মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হবে নাহ।
The Dissolution of Muslim Marriages Act, 1939 অনুযায়ী তালাক প্রদানের নিয়ম
ধারা ২ এই আইনের একজন মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদ এর ডিক্রি অর্জন করতে পারবে। তবে এই ডিক্রি অর্জন করারপূর্বে অবশ্যাই তাকে নিচের বিষয়গুলোর থেকে এক বা একাধিক বিষয় থাকতে হবে।
- ৪ বছর ধরে স্বামীর খোঁজ নেই;
- ভরনপোষন দিতে যদি ব্যর্থ বা অসমর্থ হয়;
- ৭ বছরের বা তার উপরে যদি স্বামীর হাজতবাশ হয়;
- যদি বিনা কারনে ৩ বছর যাবত প্রাসঙ্গিক চাহিদা পূরন করতে ব্যর্থ হয়;
- যদি স্বামী বিয়ের সময় থেকে পুরুষত্বহীন থাকে এবং চলতেই থাকে;
- যদি স্বামী ২ বছর ধরে পাগল বা উন্মাদ অবস্থায় থাকে;
- মহিলার অভিবাবক বা অন্য অভিবাবক ১৮ বছরের পূর্বে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়;
- স্বামী অমানবিক আচরন করে এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে;
- মহিলার অনুমতি ছাড়া সম্পত্তি নিষ্পত্তি করা এবং তাকে কোন আইনী অধিকার চর্চা করতে বাধা প্রদান;
- যদি এক বা একাধিক স্ত্রী থাকে মুসলিম আইন অনুযায়ী সমান ভাবে তার সাথে আচরন করে নাহ;
- অন্য কোন আইন ধারা বিধিবদ্ধ বিবাহ বিচ্ছেদ এর কোন কারন;
কোন ডিক্রি স্বামীকে নোটিশ না দিয়ে করা যাবে নাহ, যদি তিনি নিখোজ থাকে তাহলে তার বৈধ প্রতিনিধির কাছেনোটিশ জারি হবে
২ ধারার অধীন ডিক্রি কখন বাতিল করা হয়
ডিক্রি ৬ মাস অতিক্রম না করা পর্যন্ত কার্যকর হিসেবে গন্য করা হবে নাহ, এই সময়ে যদি স্বামী আদালতে উপস্থিতহয়ে জবানবন্দি দেয় যে, তিনি সকল ধরনের চাহিদা এবং দায়িত্ব পালন করবেন, তাহলে আদালত ডিক্রি খারিজকরে দিবে।
The Muslim Marriages and Divorces Registration Act, 1974 এর আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধন এর প্রক্রিয়া
এই আইনের ধারা ৬ এ বলা হয়েছে যে, বিবাহ বিচ্ছদ এর নিবন্ধন এর জন্য মৌখিকভাবে আবেদন দাখিলেরমাধ্যেমে করতে হবে বিবাহ নিবন্ধক এর কাছে। যদি বিবাহ নিবন্ধক আবেদন গ্রহন না করলে, ৩০ দিনের মধ্যেআবেদন কারী রেজিস্ট্রার এর নিকট বিবাহ নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করবেন, অগ্রাহ্য নিবন্ধন এর কপি সহ।
যেসব কাগজ পত্র বিবাহ বিচ্ছেদ এর সময় প্রয়োজনীয়
- বিবাহ নিবন্ধন এর কপি;
- জাতীয় পরিচয় পত্র এর রঙ্গিন কপি;
- যদি কোন বৈধ কারনের প্রমান থাকে;
- স্বামী সাজাপ্রাপ্ত থাকলে বা অসুস্থ থাকলে সেই কারনে বিচ্ছেদ এর প্রমাণস্বরূপ;
আইনের নাম | তালাক প্রদানের পদ্ধতি |
---|---|
The Muslim Family Law Ordinance, 1961 | – পুরুষ যদি স্ত্রীকে তালাক ঘোষনা করে, তাকে লিখিত নোটিশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে এবং স্ত্রীকে দেওয়া হয়। 90 দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হবে না। – চেয়ারম্যান নোটিশ পেলে 30 দিনের মধ্যে সালিশি এবং পুনর্মিলনের জন্য সালিশি কাউন্সিল গঠন করবেন। |
The Family Law Ordinance Act, 1985 | – তালাক চাইলে অবশ্যই সহকারী জজের আরজি দাখিল করতে হবে, তা হলো 30 দিনের মধ্যে। – আরজিতে ঠিকানা, কারন, ফিস, কাগজপত্র এইসব বিষয় উল্লেখ থাকবে। |
The Divorce Act, 1860 | – পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়পক্ষ পিটিশন দায়ের করে তালাক চাইতে পারে। – স্ত্রীর পিটিশনে কিছু ভিত্তি প্রয়োজন, যেমন ব্যভিচার, ধর্ষণ, যৌনতা পাশবিকতা, ইত্যাদি। – তালাক নিয়ে প্রাসঙ্গিক দলিল হলে আদালত তালাক দেওয়া বাতিল করতে পারে। |
The Dissolution of Muslim Marriage Act, 1939 | – মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদ এর ডিক্রি অর্জন করতে পারে, তবে কিছু শর্ত আছে, যেমন ব্যভিচার, ভরনপোষন দেওয়ার অসমর্থ, ইত্যাদি। – ডিক্রি স্বামীকে নোটিশ না দিয়ে করা যাবে না, এই সময়ে নোটিশ জারি হবে। – ডিক্রি প্রদানের 6 মাস অতিক্রম না করলে কার্যকর হবে। |
The Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, 1974 | – বিবাহ বিচ্ছেদ এর এই আইনের ধারা ৬ এ বলা হয়েছে যে, বিবাহ বিচ্ছদ এর নিবন্ধন এর জন্য মৌখিকভাবে আবেদন করার পদ্ধতি | |
বাংলাদেশে আপনার বিবাহ বিচ্ছেদ বা বিবাহের বিষয়ে সাহায্যের জন্য TRW এর আইনজীবী দের নিয়োগ করুন:
বাংলাদেশে তাহমিদুর রহমান রিমুরা ওয়াহিদ আইনী প্রতিষ্ঠান বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে আইনি পরামর্শ প্রদান করে:
ঢাকা, বাংলাদেশের মহাখালী ডিওএইচএস-এ TRW-এর ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট এবং আইনজীবীদের বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ এবং ভরণপোষণের বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। নিয়মিতভাবে গার্হস্থ্য ক্লায়েন্টদের মধ্যে বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যাগুলি পরিচালনা করার পাশাপাশি, এটির অনেক আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টকে তাদের আইনি সমস্যায় পরম যত্ন এবং মনোযোগ দিয়ে পরামর্শ এবং সহায়তা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:
ই-মেইল: info@tahmidur.com
অথবা info@trfirm.com
ফোন: +8801847220062 | +8801779127165
ঠিকানা: হাউস 410, রোড 29, মহাখালী ডিওএইচএস, ঢাকা।